টায়ারের গায়ে এত লেখা কেন? কি অর্থ এই লেখার?

জানুয়ারি 16, 2023

টায়ারের গায়ে এত লেখা কেন? কি অর্থ এই লেখার?
টায়ারের গায়ে খোদাই করা বা হাইলাইট করা কিছু নাম্বার এবং কোড লেটার নিশ্চয়ই আপনার চোখে পড়েছে, এই কোডগুলো কেন লেখা হয় আর এর অর্থ কিন্তা হয়তো অনেকেই জানিনা।

বর্তমানে পৃথিবীতে যত যান্ত্রিক বাহন আছে তার মধ্যে মোটরসাইকেল অন্যতম এ কথা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না।

মোটরসাইকেল অবিস্কারের পর থকেই এর জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়েই চলেছে। আমাদের জীবন যাত্রার সাথে কিভাবে যেনো এই যান্ত্রিক যানটি এক হয়ে মিশে গিয়েছে। এর আকর্ষনীয় দৃষ্টি নন্দন স্টাইল, জ্বালানী সাশ্রয়ী ইঞ্জিন, মেন্টেনেন্স খরচ কম, যেকোনো রাস্তায় চলাচল উপযোগীতা মানুষকে এর উপরে নির্ভরশীল করে তুলেছে।

তরুণদের কাছে যেমন আধুনিকতা আর স্মার্টনেসের প্রতীক ঠিক তেমনি পেশাজীবিদের কাজের হাতিয়ার। ছাত্র , শিক্ষক, সাধারণ ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে করপোরেট অফিস গুলিতে আজ মোটরসাইকেল এক নিত্য ব্যবহার্য বাহন।

এ কারণে আমরা মোটরসাইকেলর ভিন্নতাও দেখতে পাই। কোনটি কমিউটার বাইক, কোনটি স্পোর্ট বাইক, ক্রুজার বাইক, পারফর্মেন্স বাইক কতো বিচিত্র মডেলের বাইক পাওয়া যায়। আমাদের দেশে গ্রামেও বাইক একটা উল্লেখযোগ্য বাহন হয়ে উঠেছে এর তুলনামূলক ছোট আকার আর সহজে চালানোর উপযোগিতা আর দামের কারণে। বলতে গেলে সাইকেলের জায়গা দখল করে নিয়েছে বাইক।

আরো পড়ুন

আমরা জানি ছোট ছোট অনেক গুলি পার্টসের সমন্বয়ে বাইক চলাচলের উপযোগী হয়ে উঠে। ইঞ্জিন, চেসিস, চেসিসের সাথে লাগানো বিভিন্ন বডি পার্টস, লাইট, সাস্পেন্সান , টায়ার ইত্যাদি। আজ আমরা মোটরসাইকেলর অন্যতম বডি পার্টস টায়ার নিয়ে আলোচনা করবো ।

কারণ একটি সঠিক আর ভালো মানের টায়ার অনেক সময়ই মোটরসাইকেল আরোহীর জীবন রক্ষা করে থাকে । এই কারণেই ভিন্ন ভিন্ন মোটরসাইকের জন্য ভিন্ন ধরনের টায়ার রয়েছে। তাই যখন টায়ার কিনতে যাবেন তখন নিজের বাইক এবং কোথায় আপনি যাতয়াত করেন তা মাথায় রাখুন। track, sport, off-road, cruising, না touring ভিন্ন ভিন্ন বাইকের জন্য ভিন্ন ভিন্ন টায়ার আছে।

আরো পড়ুন

কিন্ত বেশি গভীরে না গিয়ে আজকে আলোচনা করবো টায়ারের এমন একটা বিষয় নিয়ে যা যেকোনো টায়ারের ক্ষেত্রেই কমন এবং যেটা আমরা অনেকেই গুরুত্ব দেই না অথচ এটা টায়ার সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ইনফরমেশন দেয়।

টায়ারের গায়ে খোদাই করা বা হাইলাইট করা কিছু নাম্বার এবং কোড লেটার নিশ্চয়ই আপনার চোখে পড়েছে, এই কোডগুলো কেন লেখা হয় আর এর অর্থ কিন্তা হয়তো অনেকেই জানিনা।

আমি উদাহরণ সহ কোডগুলো ডিকোড করে অল্প কথায় বুঝিয়ে দিচ্ছি যেন যেকোনো টায়ারের কোড দেখেই আপনি চট করে বুঝে ফেলতে পারেন টায়ারের স্পেসিফিকেশন।

আরো পড়ুন

ধরি, একটা MRF ব্রান্ডের মোটর সাইকেলের টায়ার নিলাম। এতে MRF ব্রান্ডিং করা তো থাকবেই এর সাথে টায়ারের প্যাটার্ন ও লেখা থাকবে, যেমন Zapper S, Zapper Y, Zapper FX, Revz S ইত্যাদি।

এছাড়াও টায়ার কন্সট্রাকশন যদি রেডিয়াল হয় তাহলে Radial লেখা থাকবে। অথবা রিম সাইজের আগে R লেখা থাকবে।

MRF টায়ারের ক্ষেত্রে Revz সিরিজ মানে রেডিয়াল, আর নাইলোগ্রিপ লেখা থাকলে বুঝতে হবে সেটা বায়াস বা নায়লন প্লাই টায়ার। দাম একটু বেশি হলেও রেডিয়াল টায়ারের পার্ফমেন্স তুলনামূলক অনেক ভালো হয়।

এরপর আসে সাইজ কোড। মনে করুন টায়ারের গায়ে লেখা আছে 140/70-17

১৪০ এর অর্থ হচ্ছে টায়ারটি ১৪০ মিলিমিটার চওড়া,

এবং এর সাইড ওয়ালের উচ্চতা বা এস্পেক্ট রেশিও হচ্ছে ১৪০ এর ৭০% আর ১৭ লেখাটি বুঝাবে টায়ারের ব্যাস বা রিম সাইজ। অর্থাৎ ১৭ ইঞ্চি সাইজের রিমে এই টায়ারটি ব্যাবহার করা যাবে।

সাইজের ব্যাপারটি অত্যন্ত জরুরি কারন বাইকের সাথে ম্যানুফ্যাকচারার যে টায়ারটি স্টক সাইজ হিসেবে দিয়েছে সেটিই আপনার বাইকের জন্য বেস্ট। সেইম সাইজের টায়ার ব্যাবহার করলে ভালো ব্রেকিং, ব্যালেন্স ও মাইলেজ পাবেন। কিন্ত তুলনামুলক চিকন বা মোটা টায়ার ইন্সটল করলে অপ্টিমাম পার্ফমেন্স এবং মাইলেজ ঠিকঠাক পাবেন না৷

টায়ারটি যদি টিউবলেস হয় তাহলে Tubeless কথাটিও টায়ারে লেখা থাকবে।

আরো একটা মোস্ট ইম্পর্ট্যান্ট কোড হলো ম্যানুফ্যাকচারিং ডেট বা টায়ার উৎপাদন এর তারিখ,

এটাও ৪ সংখ্যার কোড দ্বারা টায়ারের গায়ে লেখা থাকে। যেমন টায়ারের গায়ে যদি লেখা থাকে 4021 তাহলে এর অর্থ হচ্ছে টায়ারটি ২১ সালের ৪০ তম সপ্তাহে বানানো হয়েছে। মানে হলো প্রথম দুই সংখ্যা হচ্ছে সপ্তাহ আর পরের দুই সংখ্যা হচ্ছে সাল।

মনে রাখবেন তৈরি হবার তারিখ থেকে পরবর্তী ৬ বছর একটা টায়ার ব্যাবহার উপযোগী থাকে। তাই টায়ার কেনার সময় সর্বনিম্ন ৬ মাস বা সর্বোচ্চ ১ বছর আগে উৎপাদন করা টায়ার কেনার চেস্টা করবেন। বেশি পুরানো টায়ার কিনবেন না। কারন টায়ার যত পুরাতন হয় রাবার তত ডিগ্রেড হতে থাকে ফলে গ্রিপ কমে যায়।

রোটেশন মার্কিং টা টায়ারের গায়ে তীর চিনহ দিয়ে বুঝানো হয়, টায়ার ইন্সটল করার সময় তীর যেন সামনের দিকে থাকে সেটা খেয়াল রাখবেন। রোটেশন উল্টো হলে গ্রিপ কম পাবেন।

আশা করি উপরের ইনফরমেশন গুলো জেনে উপকৃত হয়েছেন। টায়ার সম্পর্কে আপনার অভিজ্ঞতা ও প্রশ্ন কমেন্টে জানাতে পারেন। ধন্যবাদ।

লেখাঃ ইকবাল আবদুল্লাহ রাজ

এডমিন # কিউরিয়াস বাইকার।

#

আরো পড়ুন