মোটরসাইকেল এখন আর শুধুমাত্র একটা বাহুর নয়। এটা একদিকে যেরকম প্রয়োজন পাশাপাশি এটা আবেগের জায়গা। আমাদের অনেকের মধ্যে এই প্রবণতা দেখা দেয় যে আমি যে মোটরসাইকেল চালাচ্ছি বা চালাবো সেটা সকলের চাইতে একটু আলাদা হওয়া চাই। আর এই অনন্যতা আনতে গিয়েই আমরা করে ফেলি বেআইনি কিছু কাজ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় বাইক মডিফিকেশন। মডিফিকেশনের মধ্যে বাইকের পার্টস চেঞ্জ করা, বাইকের লুকস পরিবর্তন করা, বাইকের কালার পরিবর্তন করাই ইত্যাদ।
জয়েন করুন ৬০ হাজারের বেশি বাইকারের গ্রুপ কিউরিয়াস বাইকার
আজকে আর্টিকেলের মাধ্যমে জানবো যে মোটরসাইকেল মডিফিকেশন করলে কি কি জরিমানা হতে পারে অথবা কতটুকু মডিফিকেশন আপনারা করতে পারবেন।
####বাইক মডিফিকেশন (Bike Modification)
বাইক কেনার সময় যে অবস্থায় থাকে, সে অবস্থার যে কোনো রকম পরিবরতনকেই বাইক মডিফিকেশন বলা যায়। বিভিন্নরকমের স্টিকার দিয়ে সাজানো থেকে শুরু করে সিট, ইঞ্জিন, লাইট, বডি, বা যে কোনো পার্টস পরিবর্তনই বাইক মডিফিকেশনের আওতায় পরে।
বিআরটিএ’র সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ (Bike Modification Law by BRTA’s Road Transport Act 2018) এবারে বিআরটিএ’র সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ তে বর্ণিত এসব নীতিমালা ও বৈশিষ্ট্যের দিকে নজর দেওয়া যাক।
২০১৮ সালের নতুন আইনের অনুসারে বাইকের বেশ কিছু টেকনিক্যাল স্পেসিফিকেশন বা প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্য পরিবর্তনের উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
বাইকের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা, সিট সংখ্যা, চাকার ভিত্তি বা বেস, চাকার আকার ও অবস্থান, ইন্ডিকেটর লাইট, ব্রেক, গিয়ার, এক্সস্ট বা ধোঁয়া নির্গমন ব্যবস্থা, ইত্যাদি যন্ত্রাংশ পরিবর্তন করা যাবে কি যাবে না, তা নিয়ে অনেক নির্দেশনা রয়েছে।
কিন্তু বাইকের মূল কিছু বিষয় পরিবর্তনশীল হবেনা। তবে বিআরটিএ’র অধ্যাদেশ ও শর্ত মেনে দরখাস্ত করে আপনি বাইকের ভিতরের ও বাইরের বেশ কিছু মডিফিকেশন করতে পারবেন।
লক্ষণীয় যে রেজিস্ট্রেশনের সময় বিআরটিএ’র কারিগরি বিনির্দেশের মধ্যে যেসব প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্যগুলোর উল্লেখ আছে, সেগুলোর মধ্যে আপনি যে কোনো পার্টসই পরিবর্তন বা প্রতিস্থাপন করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে আলাদা কোনো অনুমতির প্রয়োজন হবেনা।
আরো পড়তে পারেন
প্রথমত বাইকের হেডলাইটের ভেতরে কোম্পানি প্রদত্ত যে লাইটটি থাকে, সেটি মূলত হ্যালোজেন লাইট। এটি পরিবর্তন করে আপনি এলইডি লাইট ব্যবহার করতে পারেন।
এতে কোনো সমস্যা হবেনা। হেডলাইটের পাশে সাধারণত যে ছোটো ডিআরএল লাইট থাকে সেগুলোর রঙও আপনি কোনো সমস্যা ছাড়া পরিবর্তন করতে পারেন। হেডলাইটের উপরে যে ভাইজর প্লেটটি থাকে সেটিও আপনি সঠিক ফিটিং করিয়ে পরিবর্তন করতে পারবেন।
####কি কি মোডিফিকেশন করা যাবে (According to Bike Modification Law)
কিন্তু অবশ্যই মাথায় রাখবেন, বাইকের সম্পূর্ণ মাথা বা হেড আপনি পরিবর্তন করে অন্য কোনো মডেলের হেড ব্যবহার করতে পারবেন না। এটি ২০১৮ আইন অনুসারে সম্পূর্ণ অবৈধ।
####মাড গার্ড
আপনার চাকার যে মাড গার্ড রয়েছে, সেটিও আপনি চাইলে পরিবর্তন করতে পারবেন। চাকার রিমের যে লম্বা বার গুলো রয়েছে, এগুলো রঙ করার ক্ষেত্রেও কোনো বাধা নেই। আপনি যদি একটু মোটা টায়ার লাগাতে চান আর আপনার রিম যদি সেটা সাপোর্ট করে, সেক্ষেত্রেও আপনি সেটা করতে পারেন।
####হ্যাণ্ডেল
এরপরে আসা যাক বাইক হ্যাণ্ডেল এ। অনেকেই বাইক স্টান্টে আগ্রহী থাকেন এবং হ্যান্ডেল পরিবর্তন করার চিন্তা করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই সাবধানতা জরুরী। তবে আপনি থ্রিডি হ্যান্ডেল বার ও পাইপ হ্যান্ডেলবারের মধ্যে পরিবর্তন করে চালাতে পারেন। অবশ্যই দক্ষ কারিগরি সহায়তা অবলম্বন করবেন।
####রিয়ার ভিউ মিরর
বাইকের রিয়ার ভিউ আয়নার আকার পরিবর্তনের ক্ষেত্রেও তেমন কোনো বিধি নিষেধ নেই। তবে অবশ্যই রিয়ারভিউ মিরর খুলে বাইক চালাবেন না। অনেক ইঞ্জিনের পাশে সাধারণত প্লেট অ্যাডজাস্ট করার অপশন থাকে।
আপনি প্রয়োজনমতো অনুমোদিত শো রুম থেকে প্লেট পরিবর্তন করতে পারবেন বা খুলে রাখতে পারবেন। এটি আপনার বাইকের মূল বডির আনুসাঙ্গিক অংশ হিসেবে মডিফিকেশনের যোগ্য।
আরো পড়তে পারেন
####বাম্পার
আপনি চাইলে আপনার বাইকের বাম্পারও পরিবর্তন করতে পারবেন। বাম্পারের পাশ পরিবর্তন বা বাম্পার খুলে রাখাতে কোনো আইনি বাধা নেই। বাইকের ইঞ্জিনে গার্ড বা কাউল লাগানোর অপশন থাকে।
যদি আপনার ইঞ্জিন কাউল বা গার্ড না থাকে এবং লাগানোর অপশন দেওয়া থাকে, আপনি চাইলে এটি ইন্সটল করে নিতে পারেন। এটি ইঞ্জিনের আলাদা সুরক্ষা বা সৌন্দর্যবর্ধনে কাজ করতে পারে।
অথবা আপনার যদি ইঞ্জিন গার্ড দেওয়া থাকে কিন্তু আপনি কোনো কারণে রাখতে না চান, তাহলে খুলেও ফেলতে পারবেন।
####সিট
আপনার সিট আপনি চাইলে পরিবর্তন করতে পারবেন। সিটের দুই ভাগ থেকে থাকলে সেটিকে এক ভাগের সিটে পরিবর্তন করাতেও নিষেধাজ্ঞা নেই যদি সেটি বাইকের সাথে ফিটিং হয়।
####ফুট পেগ
বাইকে পা রাখার জন্য ফুট পেগ থাকে। এগুলোর উপরে যে রাবারের কভার থাকে, সেগুলোও আপনি পরিবর্তন করতে পারবেন।
####সাস্পেনশন
মটরসাইকেলের সামনের সাস্পেনশন আপনি পরিবর্তন করে ডাউনসাইড আপ থেকে আপসাইড ডাউন বা আপসাইড ডাউন থেকে ডাউনসাইড আপে পরিবর্তন করতে পারেন অনুমোদিত ওয়ার্কশপ থেকে। বাইকের পিছনের সাস্পেনশন দুটি থেকে একটি করাও নিষিদ্ধ নয়, কিন্তু এটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল।
####সাইল্যান্সার
একই মডেলের অথবা অল্প শব্দ হয় এমন এক্সস্ট সাইল্যান্সার বাইকে ব্যবহারের ক্ষেত্রেও কোনো বাধা নেই।
####টেইল লাইটের সংলগ্ন প্লেট ও পিছনের হ্যান্ডেলও
বাইকের টেইল লাইটের সংলগ্ন প্লেটগুলোও পরিবর্তন করা যায়। পিছনের হ্যান্ডেলও আপনি চাইলে পরিবর্তন করে গোলাকার বা বার হ্যান্ডেল লাগাতে পারেন। এতেও আইনি নিষেধাজ্ঞা নেই।
আরো পড়তে পারেন
তথ্য সূত্র: ০১, https://bikesguide.bikroy.com/advice/bike-modification-law-in-bangladesh/ ০২ , সড়ক পরিবহণ আইন, ২০১৮