পুরাতন মোটরবাইক কিনে ধরা খাওয়ার আগে জেনে নিন
মার্চ 20, 2022
Views
Shares
নিজের একটি মোটরবাইক হবে এটা আমাদের দেশের তরুন প্রজন্মের একটা মোস্ট কমন স্বপ্ন। শখ হোক বা প্রয়োজন, একটা নতুন বাইক কেনা সবসময়ই খুব এক্সাইটিং এবং আনন্দদায়ক।
কিন্ত অনেক সময় সাধ ও সাধ্যের মধ্যে সমন্বয় করা মুশকিল হয়ে দাঁড়ায়। সেক্ষেত্রে সাধ্যের বাইরের স্বপ্নে দেখা মোটরবাইকটিও আপনার জীবনে বাস্তব হয়ে ধরা দিতে পারে যদি আপনি একটু ট্রিকি ও বুদ্ধিমান হন।
আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষেরই আয় সীমিত কিন্ত শখ বা প্রয়োজন দুটোই অসীম যার ফলে দেশে সেকেন্ড হ্যান্ড মোটরবাইকের বাজার দিন দিন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। তবে রিসেলার বাজার থেকে বাইক কেনার ক্ষেত্রে বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে যা অতিক্রম না করতে পারলে সেকেন্ড হ্যান্ড বাইক কিনে আপনি পড়তে পারেন মহাবিপদে।
তাই আগে জানতে হবে, যে বাইকটি আপনি কিনতে চাচ্ছেন সেটা আসলেই কতটুকু ভালো কন্ডিশনে আছে?
আনুমানিক কতদিন ভালো সার্ভিস দিতে সক্ষম?
এক্সিডেন্টে কখনো বড় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিলো কিনা?
ইঞ্জিন এবং চেসিসে কোনো বড় সমস্যা আছে কিনা?
বাইকের সকল পেপার জেনুইন কিনা?
আসল মালিক এভেইলেবল কিনা?
মালিকানা বদল করতে কোনো জটিলতা হতে পারে কি না? ইত্যাদি৷
এখন আপনি যদি অভিজ্ঞ না হন তাহলে আপনার কেনা সেকেন্ড হ্যান্ড বাইকটি হয়ে উঠতে পারে আপনার জীবনের কালো অধ্যায়।
তাই প্রাথমিকভাবে একটা ফ্রেশ বাইক চেনা এবং কেনার ব্যাপারে কিছু টিপস দিচ্ছি যা জেনে এবং মেনে সেকেন্ড হ্যান্ড বাইক কিনতে পারলে আপনি হবেন অত্যন্ত লাভবান।
প্রথমেই দেখতে হবে বাইকের আউটলুক ফ্রেশ কিনা, অর্থাৎ বাইকের উপরিভাগে বড় কোনো দাগ, রঙচটা, আচড়, ভাংগা, মোচড়ানো বা আঘাত আছে কিনা।
কোনো নাট, বোল্ট অথবা স্ক্রু মিসিং আছে কিনা তাও খেয়াল করতে হবে।
দ্বিতীয়তঃ ইঞ্জিন।
ইঞ্জিন হল যে কোনও যানবাহনের হৃদয় এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ইঞ্জিন ঠিক না থাকলে সেই বাইকের কোনো ভ্যালু নেই। তাই ইঞ্জিন টি স্টার্ট করতে হবে এবং শব্দ খেয়াল করতে হবে, সাথে একটি পরীক্ষামূলক রাইড করে দেখতে হবে স্মুথলি চলছে কিনা এবং গিয়ারগুলো সঠিক ভাবে শিফট করা যাচ্ছে কিনা। লিকুইড কুলিং সিস্টেম থাকলে তা ঠিকঠাক কাজ করছে কিনা?
সম্ভাব্য তেল লিকেজের জন্য ভালভ এবং ইঞ্জিন কভারের আশেপাশের এলাকাগুলি পরীক্ষা করতে হবে।
যদি মালিক দাবি করেন যে ইঞ্জিনটি সম্প্রতি সার্ভিস বা রিপেয়ার করা হয়েছে, তাহলে আসলে কী কী করা হয়েছে তা নিশ্চিত করার জন্য বিলের কপি চাইতে পারেন৷
তৃতীয়তঃ চেসিস ও সাসপেনশন।
সাসপেন্সন স্মুথলি অপারেট করছে কিনা দেখতে হবে, কোনো লিকেজ আছে কিনা পর্যবেক্ষণ করতে হবে। তারপর চেসিস এলাইনমেন্ট ঠিকঠাক আছে কিনা ভালো করে দেখে নিতে হবে এবং চেসিস বাকা বা ঝালাই করা থাকলে বুঝতে হবে বাইকের এক্সিডেন্ট হিস্ট্রি আছে। এরকম বাইক কেনা থেকে বিরত থাকাই ভালো।
তাছাড়া বেশি পুরাতন বা অযত্নে থাকার কারনে বাইকের চেসিস মরিচা পড়ে ভংগুর হয়ে গেছে এরকম বাইকও এড়িয়ে যাবেন। এক্সহস্ট পাইপে কোনো ভাংগা-ফাটা, মরিচা আছে কিনা তাও দেখবেন।
চতুর্থতঃ চাকা ও টায়ার।
বাইক কেনার আগে বাইকের টায়ার এবং চাকা চেক করা উচিত। বাইকটিকে ডাবল স্ট্যান্ডে রাখুন, গিয়ার নিউট্রাল পজিশনে রাখুন এবং সামনের ও পিছনের চাকাটি ঘুরান। চাকার উভয় দিক এবং পিছনের দিক থেকে খেয়াল করুন কোনো আন-ইভেন বা টাল আছে কিনা। ।
টায়ারের বাইরের সাইডওয়ালে চার-সংখ্যার DOT নম্বরও রয়েছে। প্রথম দুটি সংখ্যা নির্দেশ করে যে সপ্তাহে টায়ার তৈরি করা হয়েছিল, শেষ দুটি বছর নির্দেশ করে।
নিশ্চিত হোন যে টায়ারটি পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে ব্যবহার করা হয়নি।
পঞ্চম চেকঃ ক্লাচ ও ব্রেক ঠিকঠাক কাজ করছে কিনা পরিক্ষা করতে হবে।
ষষ্ঠ চেকপয়েন্টঃ ইলেক্ট্রিক্যাল এবং ওয়ারিং।
ফ্রেশ কন্ডিশন বাইকের সমস্ত ইলেক্ট্রনিক পার্ট ও অয়ারিং অক্ষত থাকতে হবে।
হাই এবং লো বিমের হেডলাইট চেক করুন।
ইন্ডিকেটর এবং হর্ন সহ বাইকের সমস্ত সুইচ চেক করুন। যদি বাইকটিতে ডিজিটাল মিটার থাকে তবে সেটা ফাংশনাল কিনা চেক করুন, ব্যাটারি এবং ওয়ারিং হার্নেস ভালো আছে কিনা দেখে নিন।
সপ্তম কাজঃ
উপরের বিষয়গুলোতে সন্তস্ট হলে তারপর বাইকের রেজিষ্ট্রেশন সার্টিফিকেট, ট্যাক্স টোকেন ইত্যাদি যাচাই করুন এবং মালিকানা বদলি করার জন্য সব কিছু প্রস্তত আছে কিনা ভালো করে জেনে নিন।
অনেকে পুরাতন মোটরবাইক কিনতে গিয়ে প্রথমেই মিটারে মাইলেজ কম না বেশি, তার উপর নির্ভর করে দামদর শুরু করে দেয়, এটা সাংঘাতিক বোকামি।
কারন বাইক রিসেলাররা মিটার টেম্পারিং করে মাইলেজ অনেক কমিয়ে রাখে।
মনে রাখবেন, মাইলেজ দেখে নয়, বাইক কিনতে হবে কন্ডিশন বুঝে। তাহলেই সাধ্যের সাথে মিলে যাওয়া শখের বাইকটি আপনার জন্য আশীর্বাদ হয়ে উঠবে।
পোস্টটি উপকারি মনে হলে শেয়ার করুন সবার সাথে।
আপনার মন্তব্য কমেন্টে লিখে জানান। ধন্যবাদ।