ABS ব্রেকিং কি? কিভাবে কাজ করে?

জুলাই 09, 2019

ABS ব্রেকিং কি? কিভাবে কাজ করে?

মোটর সাইকেল আমরা সবাই মোটামুটি চালাই। কিন্তু সবাই কি জানি এই মোটর সাইকেল বা মোটর বাইকে কতটা সেক্টর আছে আর সেগুলোর কাজ করি। আজ এমনই এ অজানা সেক্টর নিয়ে আলোচনা করবো এখানো। মোটর সাইকেলের একটি ব্যাপার সবাই একটুআধটু জানে যার নাম ABS সিস্টেম। কিন্তু কি এই ABS সিস্টেম আর এর প্রধান কাজ কি? চলুন জানা যাক এই সিস্টেমটা আসলে কি এবং এর কাজ সম্পর্কে।

ABS সিস্টেম হলো Anti Lock Breaking System. এখানে দুই ধরনের Anti Lock Breaking System আছে। এগুলো হলো:

১. Single Channel ABS (Anti Lock Breaking System).

২. Dual Channel ABS (Anti Lock Breaking System).

ABS এর কাজ: ABS সিস্টেমের কাজ হলো মোটর সাইকেল বা মোটর বাইকে যখন চালক ব্রেক করবে তখন চাকা লক না হতে সাহায্য করা। আরো সহজভাবে বললে, চাকাকে লক হতে বিরত রাখে এই ABS সিস্টেম। মূলত এই কাজটি সম্পন্ন হয় একটি সেন্সরের মাধ্যমে। একজন চালক ব্রেকে প্রেস করার পরে এই সেন্সরের মাধ্যমে ABS ব্রেক ফ্লুইডে প্রেশার তৈরি করে যাতে করে চাকা আর লক হওয়ার সুযোগ পায় না। Anti Lock Breaking System তার সেন্সর দিয়ে দুই চাকার গতি সবসময় মনিটর করে। তাই ব্রেক করার সাথে সাথে বাইকের গতির সাথে মিল রেখে ব্রেক ফ্লুইডে প্রেশার তৈরী হয়ে থাকে।

এবার আমরা জানবো Anti Lock Breaking System এর দুটি ধাপ নিয়ে। যেগুলো হলো: Single ABS, Dual ABS.

Single ABS :
এই Single Anti Lock Breaking System এ মোটর সাইকেলের সামনের চাকায় সেন্সর থাকে। যার ফলে সহজেই চাকা লক হওয়া থেকে বিরত থাকে। এই Single ABS এর ক্ষেত্রে আপনি চাইলে এই সিস্টেমটা চালু রাখতে পারবেন আবার বন্ধও করে রাখতে পারেন। তবে যেসব বাইকে Single ABS আছে সেগুলো দিয়ে হুইলি বা স্টান্ট করতে পারবেন।

Dual ABS :

Dual Anti Lock System এ সেন্সর একসাথে কাজ করে। সহজ ভাষায়, চালক ব্রেকে প্রেস করার পর সেন্সর দুই চাকার উপর সমান ভাবে ব্রেকের উপর প্রেশার প্রয়োগ করে। আর যেহেতু এর প্রধান কাজই হলো ব্রেক ফ্লুইড নিয়ে। যত জোরেই চালক ব্রেক প্রেস করে না কেন যদি Anti Lock system অন থাকে তাহলে সেন্সর সেই ব্রেক ফ্লুইডের প্রেশার কমিয়ে দেয় তবে এমন করে কমায় যেন ব্রেক ও হয় আবার চাকাও লক না হয়।

ABS এর সিস্টেমের ফলে দুর্ঘটনা অনেকটাই আজ কাল কমেছে। সামনে আরোও কমে আসবে। এখনের আলোচনা একটা উদাহরণ সহ হোক তাহলে বুঝতে সুবিধে হবে। যদি আমি কাঁদা বা বালুর রাস্তা দিয়ে বাইক নিয়ে যাই তাহলে কি হবে? ব্রেক চাপলেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মাটিতে পড়ে যাবো। তাই না? কিন্তু এই ABS সিস্টেম এই পড়ে যাওয়া থেকে আমাকে আটকাবে। কিভাবে জানেন? এই ABS সিস্টেমের সেন্সর চাকা লক হতে দিবে না। ফলে আপনার মাটিতে পড়ে যাওয়ার সম্ভবনা শূন্য।

আগের সব বাইকে এই ফিচার বা সিস্টেম ছিলো না বলে এর সম্পর্কে অনেকেরই ধারণা নেই। আবার কেউ কেউ কেবল সিস্টেমের নামটাই শুনেছেন, কাজটা আর জানা হয় নি। আমাদের দেশে অনেক পরে এই সিস্টেম আসলেও বিদেশে এর প্রচলন শুরু হয়েছে বহু আগে। জানা যায় ১৯২৮ সালে জামার্নীতে ABS সিস্টেমের শুরু হয়। এবং সর্বপ্রথম এই সিস্টেম ব্যবহার করা হয় ১৯৫৮ সালে Royal Enfield নামক মোটর বাইকে। বাংলাদেশে এত প্রভাব এতটা পড়ে নি তখনো। তবে এসেছে বেশ আগেই। নব্বইয়ের দশকেই বাংলাদেশে প্রবেশ করে এমন সিস্টেম। ১৯৯৫ সালের দিকে কিছু গাড়িতে এই সিস্টেম চালু হয়। কিন্তু তখন সব গাড়িতে ছিলো না। কিন্তু এখন সব ধরনের গাড়িতে ABS সিস্টেম আছে, যার ফলে এর প্রচলনও বেশ এখন আমাদের দেশে। কিন্তু বাইকে এখনো পুরোপুরিভাবে এই সিস্টেম চালু হয় নি বাংলাদেশে।

বাইক রাইডের সময় অস্বাভাবিকভাবে হুট করে সামনে কিছু চলে আসলে চালক চোখে অন্ধকার দেখা শুরু করে। কি করবে বুঝতে পারে না। এই অল্প সময়ের মধ্যে মাথাও ঠিক মত কাজ করে না। ব্রেক করবে কি না সেটা ভাবতে ভাবতেই সময় চলে যায়। আবার ব্রেক করলে নিজেই জায়গায় পড়ে যায়। মূলত এটার জন্যই ABS সিস্টেমের উদ্ভাবন হয়। এই সিস্টেম প্রয়োগের ফলে দুর্ঘটনা কমে যাবে অনেকটাই।

মোটর সাইকেল বা মোটর বাইক এ দেশে অনেক বছর যাবত চলে আসছে। যোগাযোগ অন্যতম বাহন হিসেবেও এর ভূমিকা অপরিসীম। কিন্তু দুঃখের বিষয় দেশের প্রায় সকল মোটর বাইক এখনো ABS সিস্টেমের আওতায় আসে নি। ফলে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। প্রাশ হারাচ্ছে কত শত মানুষ। কিন্তু এখানে চালকের ভুল বা দোষের কিছুই না। কেবলই একটি সিস্টেমের অভাব। হাইওয়ে বা বিশ্বরোডে মোটর সাইকেল আরোহীরা কত প্রাণ হারাচ্ছেন এই সিস্টেমের অভাবে। হুট করে ব্রেক করলে অস্বাভাবিকভাবে বাইকের গতি কমে দুর্ঘটনা ঘটছে।

দৈনন্দিন জীবনে আমাদেরকে অনেক প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। বৃষ্টিভেজা, তৈলাক্ত রাস্তায়ও আমাদেরকে বাইক নিয়ে যেতে হয়। তবে সেখানে থাকছে না দুর্ঘটনা না হওয়ার সম্ভবনা। বরং দুর্ঘটনা না হলেই মানুষ অবাক হচ্ছে। ABS সিস্টেম থাকলে এই প্রতিকূলতায়ও আমরা অনায়াসে বাইক চালাতে পারি। মনে করুন সামনে যদি হঠাৎ করে একটা ছাগল বা গরু চলে আসে সেক্ষেত্রে পাশ কাটিয়ে যাওয়াটা হবে ভয়ংকর ব্যাপার। কারণ এখানে বাইক থেকে পড়ে যাওয়ার সম্ভবনা ১০০ তে ৯০। ভাগ্যের জেরে কেউ কেউ যেতে পারে। কিন্তু ABS থাকলে আর দুর্ঘটনা বা রাইডারের পড়ে যাওয়ার সম্ভবনা একদমই থাকছে না। বরং খুব সহজভাবে বা হেসেখেলেই পাশ কাটিয়ে যাওয়া যাচ্ছে।

আবার চিন্তা করা যাক কারো বাড়ি বা বাসা পাহাড়ি এলাকায়। প্রতিদিন এমন রাস্তায় তাদেরকে বাইক রাইড দিতে হবে। বৃষ্টির দিনে পাহাড়ী রাস্তা তৈলাক্ত হয়ে বসে থাকে। সোজা রাস্তায়ই যেখানে রাইডারকে হিমশিম খেতে সেখানে এমন রাস্তায় দুর্ঘটনার চান্স অনেক বেশি। যেকোনো সময় স্লিপ করে পড়ে যেতে পারে ব্রেক করলেই। কিন্তু ABS সিস্টেম এই পড়ে যাওয়া থেকে রাইডারকে রুখে দিবে। ফলে রাইডার বা বাইক কারোই ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনা নেই। মূলত এসব কাজেই ABS বা Anti Lock Breaking System এর প্রয়োজন।

বাংলাদেশে বেশি সিসির বাইক চালানো যায় না। কারণ সরকারের পক্ষ থেকে নিষেধ আছে। একটা লিমিটেড সিসি পর্যন্ত বাইক দেশে চালানো সম্ভব। কিন্তু এই লিমিটেড এডিশনের বাইকের ক্ষেত্রে ABS সিস্টেম থাকছে না। যার ফলে আমাদের দেশের রাইডারটা এ থেকে যেমন বঞ্চিত হচ্ছেন তেমনি দুর্ঘটনায় অনেকে প্রাণ হারাচ্ছেন প্রতিদিন। সরকারের উচিত যেখানে এই সিস্টেম বাধ্যতামূলক করা উল্টো আরো নিষেধ করা হচ্ছে।

যাই হোক উপরিউক্ত আলোচনা থেকে আমরা ABS বা Anti Lock Breaking System সম্পর্কে জানালাম। যার মধ্যে আবার রয়েছে দুটি ধাপ। ঐ দুটি ধাপসহ পুরো ব্যাপারটা নিয়ে ধারণা রাখা একজন রাইডারের জন্য অত্যন্ত জরুরী। আমাদের এই ব্লগে আমরা বাইকের যাবতীয় জিনিস নিয়ে নিয়মিত আলোচনা করবো। আমরা বিশ্বাস করি একজন পারফেক্ট রাইডার হতে হলে বাইকের ভেতরের কাজ গুলো সম্পর্কেও ধারণা রাখতে হয়। কেবল বাইক রাইড দিতে পারলেই হয় না। এছাড়া বাইকের প্রয়োজনীয় এবং করণীয় ব্যাপার গুলো জেনে রাখা বাধ্যতামূলক। তবেই অনেক প্রতিকূল অবস্থা থেকেই হাসিমুখে ফিরে আসা সম্ভব। প্রতিদিন কত রাইডার জীবন বাজি রেখে রাইড দিয়ে যাচ্ছেন। আসুন বাইক সম্পর্কে জানি এবং নিরাপডে রাইড দেই।