কেন বাইক চালানোর সময় হেলমেট পড়বেন?

আগস্ট 14, 2019

কেন বাইক চালানোর সময় হেলমেট পড়বেন?

মোটর সাইকেল বা বাইকের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ আর প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের নাম হেলমেট। আমরা যারা বাইক রাইডার কিংবা নিয়মিত বাইক রাইডের উপরেই থাকি তাদের জন্য হেলমেটকে বলা হয় জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জাম। অনেকেই এই হেলমেট না পড়ার জন্য অনেক অজুহাত উপস্থাপন করেন কিন্তু এই হেলমেটের জন্যই অনেক বড় বড় দুর্ঘটনা থেকেও বেচে ফেরা সম্ভব। আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় মোটর বাইক চালানোর সময় হেলমেট পড়ার প্রয়োজনীয়তা। চলুন তবে শুরু করা যাক। আলোচনার মাধ্যমে জানা যাক কেন বাইক রাইডের জন্য হেলমেট প্রয়োজন আর বাধ্যতামূলক।

হেলমেটের ব্যবহার :
একটা প্রশ্ন আজকাল রাস্তায় বের হলেই চোখে ভাসে। হেলমেট ব্যবহার করে কার থেকে বাঁচতে চাই আমরা? দুর্ঘটনা থেকে? না কি পুলিশের মামলা থেকে? শহরের রাস্তায় বের হলে দেখা যায় অনেকেই নাম মাত্র নিম্নমানের হেলমেট ব্যবহার করেন মামলার ভয়ে। কিন্তু তারা হয়তো জানেন না মামলার থেকে রক্ষা পেলেও জীবনের ঝুকি আরো বেড়ে যাচ্ছে। পুলিশকে ফাঁকি দিলেও দুর্ঘটনাকে কি ফাঁকি দেওয়া সম্ভব? অনেকদিন ধরেই পুলিশ বা প্রশাসন চেষ্টা করছে মোটর সাইকেল বা বাইক রাইডে হেলমেট বাধ্যতামূলক করা। এখন আমরা তার প্রভাব দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু প্রশাসনের উচিত নিম্নমানের বাজারে নিম্নমানের হেলমেটের সরবরাহ বন্ধ করা এবং রাইডারকে ভালো মানের হেলমেট কিনতে বাধ্য করা। কারণ আমরা সবাই জানি একটি দুর্ঘটনা সারা জীবনের কান্না।

হেলমেটের প্রকারভেদ :
বাজারে পাঁচ ধরনের হেলমেট রয়েছে। নিরাপত্তা সরঞ্জাম হিসেবে এই হেলমেট আপনার সুবিধা অসুবিধা যাচাই করে নির্বাচন করতে পারেন। পাঁচ ধরনের হেলমেট গুলো হল –

১. ফুল ফেস হেলমেট, ২. ডুয়াল স্পোর্ট, ৩. হাফ শেল, ৪. মডুলার, ৫. ওপেন ফেস।

নিরাপত্তার জন্য কেমন হেলমেট প্রয়োজন :
পূর্ণ নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজন সম্পূর্ণ মুখ আবৃত হেলমেট। এমন হেলমেট আপনার আমার পূর্ণ নিরাপত্তা দিতে সক্ষম। যারা অনেক লম্বা সময় এবং লং ড্রাইভে যান তাদের জন্য এমন হেলমেটের বিকল্প নেই। বড় বড় বাইকের কোম্পানিরাও এমন কথাই বলে। আবার যদি আপনি কেবল শহরের ভেতরে খানিকটা জায়গা অর্থাৎ শুধুমাত্র অফিসে আসা যাওয়া করেন তবে আপনার উচিত অর্ধেক মুখ আবৃত করে এমন হেলমেট ব্যবহার করা। কারণ অতিরিক্ত গরমে এমন হেলমেট আপনাকে স্বস্তি দিবে। একই সাথে বাতাস ঢুকতে সক্ষম। কিন্তু আরেকটা ব্যাপার হলো এমন অর্ধেক আবৃত হেলমেট আপনাকে কোনভাবেই পূর্ণ নিরাপত্তা দিবে না। কাজেই সঠিক নিয়ম মেনে মোটর সাইকেল চালাতে হবে।

হেলমেটে ফিতার ব্যবহার :
হেলমেট আমাদের ঠিক কতটা নিরাপত্তা দিবে সেটা নির্ভর করে হেলমেটের ফিতার উপর। নিরাপত্তার জন্য যেহেতু হেলমেট ব্যবহার করা হয় কাজেই ফিতা শক্ত করে লাগাতে হবে। আর যদি নিরাপত্তাই পাওয়া গেল না তবে এই হেলমেট ব্যবহার করেই লাভ কি। এজন্য হেলমেটে শক্ত ফিতার ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে এবং প্রতিবার রাইড শুরু করার আগে ভালো করে চেক করে নেওয়া উচিত হেলমেটের ফিতা ঠিক ভাবে শক্ত হয়ে লেগেছে কি না।

হেলমেট নির্মাণ পদ্ধতি :
অনেকেই জেনে অবাক হবেন যে হেলমেট নির্মাণ পদ্ধতিও অনেক বড় একটি ভূমিকা পালন করে। হেলমেট কি কি উপাদান দিয়ে তৈরি হয়েছে সেটা বিভিন্ন ব্যাপারকে প্রভাবিত করে যেমন ওজন, স্বাচ্ছন্দ্য এবং নিরাপত্তা রেটিংস। বেশির ভাগ হেলমেট তৈরি হয় পলিকার্বনেট, ফাইবারগ্লাস কম্পোসিট, এবং কার্বন ফাইবার দিয়ে।

নিরাপত্তার প্রয়োজনে হেলমেটের মান কেমন হওয়া উচিত :

আমাদের দেশে হেলমেটের মান নির্ধারণ করার মত কোন প্রতিষ্ঠান নেই। আর এখানেই হয়েছে সবচেয়ে বড় সমস্যা। আমাদের দেশে যত ধরনের হেলমেট আসে তার অধিকাংশই চায়না, ভারত আর থাইল্যান্ডের। কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না হেলমেট বিক্রয়ের জন্য তার মান নিশ্চিত করে Department Of Transport বা DOT এর স্টিকার লাগানো বাধ্যতামূলক করেছে আমেরিকান প্রশাসন। আর এটা থেকেই বুঝা সম্ভব এদের কাছে হেলমেটের মান ঠিক কতটা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আমাদের দেশে এমন কোন বাধ্য বাধকতা নেই। বাজারে অনেক ধরনের দারুণ হেলমেট পাওয়া যায় যেগুলো আবার অনেক স্টাইলের। কিন্তু এমন হেলমেট কেনাই আপনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে না। আপনাকে এই হেলমেট গুলো ব্যবহার করতে হবে এবং প্রতিবার রাইডের আগে ফিতা শক্ত করে বাঁধতে হবে। একটি ভালো হেলমেট আপনাকে ধুলো বালি, কাদামাটি থেকে শুরু করে একদম শক্ত রাস্তায়ও নিরাপত্তা দেবে। এর পাশাপাশি বাইক থেকে নির্গত ক্ষতিকারক ধোয়া থেকে মুক্তি দেবে।

সবসময় হেলমেটের মুখ আবৃত করার অংশ সাদা গ্লাস এর কিনুন । মনে রাখবেন বিভিন্ন রঙের গ্লাস (মুখ আবৃত কারক) কিনলে আপনি রাতে পরিস্কার দেখতে পারবেন না ।একটি পরিস্কার গ্লাস এর মাধ্যমে আপনি তীব্র সূর্যালোকের মধ্যেও ভালভাবে দেখতে পারবেন । আপনার রঙিন গ্লাস কেনার দরকার নেই কারণ বাইক চালানোর সময় আপনি সানগ্লাস ব্যবহার করতে পারেন । বর্তমানে এমন অনেক ধাতু পাওয়া যায় যেগুলো ভারী প্লাস্টিকের চেয়েও হালকা । হেলমেট প্রস্তুতকারকেরা কম দামে প্রচুর হেলমেট তৈরী করছে যেগুলো একই সাথে সর্বাধিক নিরাপত্তাও দেবে। তাই অসংখ্য ডিজাইন ও রঙ হতে হালকা ওজনের হেলমেট পছন্দ করুন । ভালো মানের হেলমেট ব্যবহারের বিকল্প নেই। কাজেই নিম্নমানের হেলমেটের পেছনে না ছুটে আমাদের উচিত সঠিক মান নিশ্চিত করে ভালো মানের হেলমেট ব্যবহার করা।

হেলমেট কিভাবে জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জাম :
আমাদের দেশে বাইক এক্সিডেন্টে প্রতি বছর কত মানুষের মৃত্যু হয়। পত্রিকার পাতা আর টিভির সামনে বসলেই এমন খবর পাওয়া যায়। কিন্তু যদি ভালো মানের হেলমেট ব্যবহার করা হয় তাহলে ৬০% মৃত্যু প্রতিহত করা সম্ভব। এখন ভাববেন হেলমেট কিভাবে জীবন বাঁচায়। চলুন তবে জানা যাক হেলমেট কিভাবে জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জাম।

হাইওয়ে বা ফাঁকা রাস্তায় সবাই ৬০/৭০ কি. মি. স্পিড বা গতিবেগে বাইক চালায়। তখন হঠাৎ করে যদি অন্য কোন গাড়ি ধাক্কা দেয় অথবা নিজেই কন্ট্রোল হারিয়ে মাটিতে আছড়ে পড়েন তখন হাত/পা আগে পড়লে অনেকখানি চামড়া ছিলে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে। কিন্তু যদি আগে মাথা পড়ে তাহলে হেলমেটবিহীন খুব কম মানুষ কেবল মানুষ ফেটে বেঁচে যান। আর বেশিরভাগ রাইডারেরই মাথার মতিষ্ক বের হয়ে রাস্তায় পড়ে থাকে আর জায়গায়ই প্রাণ হারাতে হয়। যদি মাথায় একটি ভালো মানের হেলমেট থাকে তাহলে এভাবে মাথায় আঘাত পেয়ে প্রাণ হারানোর সম্ভবনা একেবারেই ক্ষীণ।

মোটর বাইক চালানোর সময় হেলমেটের প্রয়োজনীয়তা :
এখন পর্যন্ত এই আলোচনায় উঠে এসেছে হেলমেটের ব্যবহার, মান ইত্যাদি। আমরা এটাও বুঝতে পেরেছি ইতিমধ্যেই হেলমেট কেন ব্যবহার করতে হবে।

আমরা অনেকেই হেলমেট ব্যবহার করি কেবল পুলিশের সমস্যা এড়িয়ে চলতে। কিন্তু কত জন নিজের নিরাপত্তার জন্য হেলমেট ব্যবহার করে থাকি? এখন বাজারে ৫০০-১০০ টাকায়ও হেলমেট পাওয়া যায়। কিন্তু শুনতে খারাপ লাগলেও এটাই সত্যি যে এরকম নিম্ন মানের হেলমেট কিছুতেই আপনার জীবন বাঁচাতে পারবে না। আপনি যদি ২০০০-৩০০০ টাকা খরচ করে ভালো মানের হেলমেট ব্যবহার করেন তাহলে অনেক অনেক বড় দুর্ঘটনা থেকেও অনায়াসে বেঁচে ফিরতে পারবেন। আমরা অনেকেই এমনটা জানার পরেও হেলমেট ব্যবহারে অনীহা প্রকাশ করি। কিন্তু এতে ক্ষতিটা কার? ক্ষতিটা অবশ্যই আমাদের। নিজেদের সচেতনতায় হেলমেট ব্যবহার করা আবশ্যক। মোটর বাইক চালানোর সময় হেলমেট পড়ার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।

রোগ প্রতিরোধে হেলমেটের ব্যবহার :
অনেকেই আছেন যারা এল্যার্জীতে আক্রান্ত। একটু ধুলো বালি, ময়লা আবর্জনা লাগলেই তাদের অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। আবার কেউ কেউ আছেন যাদের সামান্য ঠান্ডা লাগলেই জ্বর, কাশিতে আক্রান্ত হোন। যদি বাইক চালানোর সময় হেলমেট ব্যবহার করেন তাহলে ধুলো বালি, ময়লা আবর্জনা চোখে মুখে লাগতে পারবে না। আর অতিরিক্ত ঠান্ডা বাতাস মুখে আর কানে লাগার সুযোগও থাকে না। কাজেই তখন অসুস্থ হওয়ার সম্ভবনা একদমই কমে যায়।

হেলমেটের যত্ন নেওয়া প্রয়োজন :
প্রতিবার রাইডের সময় হেলমেট ব্যবহার করা হয়। আর প্রত্যেকদিন ব্যবহারের পরে হেলমেট পরিষ্কার করতে হবে। শুধুমাত্র গ্লাস নন – ডিটারজেন্ট কোন কিছু দ্বারা পরিষ্কার করতে হয় এবং কোমল কাপড়ের সাহায্যে মুছে ফেলতে হয় যেন পানি শুকিয়ে যায়। এছাড়া হেলমেটে বালি জমতে পারে। আমাদের উচিত প্রতিবার রাইডের আগে হেলমেটের ভেতরের দিক পরিষ্কার করা। এছাড়া প্রতি সপ্তাহে একবার হেলমেটটিকে সূর্যের আলোর নিচে রাখতে হবে। আর এতে করে হেলমেটে দুর্গন্ধ হওয়ার সম্ভবনা থাকে না।

আজকের এই আলোচনার মাধ্যমে আমরা জানলাম মোটর বাইক চালানোর সময় হেলমেটের প্রয়োজনীয়তা। একজন বাইকারের জন্য হেলমেট অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি সরঞ্জাম। হেলমেট ব্যবহার করেই আমি আপনি আমরা বেঁচে যেতে পারি অনেক বড় দুর্ঘটনার জন্য। চলুন নিয়ম মেনে বাইক রাইড করি। সুন্দর জীবন যাপন করি। শুভ হোক আপনার যাত্রা।