ইঞ্জিন ফ্লাশিং, ক্ষতি না লাভ ?

মার্চ 22, 2022

ইঞ্জিন ফ্লাশিং, ক্ষতি না লাভ ?

আধুনিক যুগে ইঞ্জিনের একুরেট পার্ফর্মেন্স এবং এফিসিয়েন্সি নিয়ে আমরা বেশ কনসার্ন। তাই দীর্ঘদিন বাইক ব্যাবহারের পর এটা অনুভব করতে পারি যে ইঞ্জিন সেই আগের মত পার্ফর্মেন্স দিচ্ছে না, রেসপন্স কমে গেছে, সার্ভিসিং করিয়েও খুব একটা লাভ হচ্ছে না, তাহলে ঝামেলাটা কোথায়???

আসুন সমস্যার একটু গভীরে যাওয়া যাক…

এয়ার ফিল্টার বেশি নোংরা হয়ে গেলে ফিল্টার দিয়ে অল্প অল্প করে ময়লা ইঞ্জিনের ভিতর ঢুকতে থাকে যা ইঞ্জিন অয়েলের সাথে মিশে ইঞ্জিনের নানান যায়গায় জমতে থাকে।

তাছাড়া নোংরা এয়ার ফিল্টারের কারনে থ্রোটলের সাথে মাপমত ফুয়েল এবং এয়ার মিক্সচার হতে পারেনা।

ফলে তেলের অপচয় হয়। বাড়তি আনবার্ন্ড ফুয়েলও ভ্যাপোরাইজড হয়ে ময়লা হিসেবে ইঞ্জিনের নানান ফাকা যায়গায় ডিপোজিট হিসেবে জমা হতে থাকে।

এই জমতে থাকা ময়লা একসময় অয়েল সার্কুলেশনের জন্য ছোট ছোট ছিদ্রগুলো ব্লক করে ফেলে যার কারনে অয়েল সার্কুলেশন যথাযথ ভাবে হয় না, এতে ইঞ্জিন ওভারহিট হতে পারে এবং ইঞ্জিনের পার্ফর্মেন্স ড্রপ করতে থাকে

তবে ঘটনাগুলো খুব স্লো প্রসেসে ঘটে তাই দেখা যায় ৫/৭ বছর বাইক চালানোর পরে ইঞ্জিনের রেসপন্স লক্ষনীয়ভাবে কমে গেছে বলে মনে হয়। এর আগে খুব একটা টের পাওয়া যায়না।

এই সমস্যা গুলো থেকে মুক্তি পেতে প্রয়োজন পড়ে ইঞ্জিন ফ্ল্যাশ করার। এখন অনেকের মনেই প্রশ্ন আসতে পারে,

ইঞ্জিনফ্ল্যাশিংকি?

ইঞ্জিন ফ্ল্যাশ হচ্ছে একটা ক্যামিক্যাল এডিটিভস।

এর কাজ হচ্ছে ইঞ্জিনের ভিতরের ময়লা পরিষ্কার করা।

ইঞ্জিনের অয়েল ক্যাপ খুলে পরিমান মত ঢালতে হয়। এরপর আইডল আর পি এম রেখে ১০-১৫ মিনিট ইঞ্জিনকে স্টার্ট করে রাখতে হবে।

এই সময়ে থ্রোটল দেয়া হারাম।

তারপর ইঞ্জিন অয়েল ড্রেন দিয়ে ফ্রেশ ইঞ্জিন অয়েল এবং অয়েল ফিল্টার ইন্সটল করতে হবে।

এখন কথা হচ্ছে ইঞ্জিন ফ্ল্যাশিং কি আসলেই জরুরি?

কত কিমি পর পর ইঞ্জিন ফ্ল্যাশিং করবো?

আসলে ইঞ্জিনে ময়লা জমার প্রসেস টা খুবই স্লো তাই ইঞ্জিন ফ্লাসিং প্রয়োজন হয় তখনই যখন বাইকটার বয়স ৫-৭ বছর বা তারও বেশি হয়। ইঞ্জিন ফ্ল্যাশ করার পরে ইঞ্জিন একদম নতুনের মত হয়ে যায়। তবে যারা মিনারেল অয়েল বেশি ইউজ করেন তাদের বাইকের ইঞ্জিনে স্লাজ বা ময়লা তুলনামূলক বেশি জমা হয়।

ইঞ্জিন ফ্ল্যাশ করলে কি লাভ?

ফ্লাশিং করলে ইঞ্জিনের ভালভ, রিং এবং অন্যান্য মুভিং পার্টসগুলোতে জমে থাকা ময়লা পরিস্কার হয়ে যায় এতে ইঞ্জিন ভালোভাবে পারফর্ম করতে পারে৷

কম্বাশন প্রসেস ভালোভাবে হতে পারে বিধায় ফুয়েল এফিসিয়েন্সি বা মাইলেজ বেড়ে যায়৷।

রিং-পিস্টন পরিস্কার হবার কারনে ক্ষয় কমে যায়, এতে ইঞ্জিনের লাইফ টাইম বাড়ে।

তবে ইঞ্জিন ফ্লাশিং এর ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি।

কম সিসির বাইকের ইঞ্জিনের ক্ষেত্রে ইঞ্জিন ফ্ল্যাশিং করলে ক্লিনিং এডিটিভস এর কারনে রিং পিস্টন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

ইঞ্জিন ফ্ল্যাশ করলে গ্যাসকিট ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া এবং অয়েল সীল লিকেজ হবার সম্ভাবনা থাকে তাই ফ্লাশিং করার পর গ্যাসকিট এবং অয়েল সীল চেঞ্জ করার প্রয়োজন হতে পারে।

তাই প্রয়োজন ব্যাতীত লোকাল মেকানিকের কথায় ইঞ্জিন ফ্লাসিং এর মত কাজ করতে যাবেন না। আগে নিশ্চিত হবেন আপনার বাইকের ইঞ্জিনে ফ্লাশিং করা আসলেই প্রয়োজন আছে কিনা? এবং অবশ্যই এক্সপার্ট হ্যান্ড ছাড়া কাজ টা করতে যাবেন না৷।

ভালো থাকুক আপনার বাইক।