বাইকের জন্য সঠিক টায়ার নির্বাচন

আগস্ট 18, 2019

বাইকের জন্য সঠিক টায়ার নির্বাচন
বাইকারদের একটি বড় চিন্তার নাম টায়ার। টায়ার নিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় প্রতিনিয়ত। কিভাবে সঠিক টায়ার নির্বাচন করা যায় এই পদ্ধতি জানতে সবাই আগ্রহী। টায়ার নির্বাচনে কি আসলেই কোন নিয়ম আছে? যেহেতু প্রশ্নটা সঠিক টায়ার নির্বাচনের সেক্ষেত্রে অবশ্যই কিছু বিশেষ নিয়ম বা পদ্ধতি থাকবেই। আমাদের আজকের আলোচনা বাইকের সঠিক টায়ার নির্বাচন নিয়ে। ঠিক কি কি কারণে টায়ার সঠিক হতে পারে সেটাই জানার চেষ্টা করবো এই আলোচনার মাধ্যমে।

বাইকারদের একটি বড় চিন্তার নাম টায়ার। টায়ার নিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় প্রতিনিয়ত। কিভাবে সঠিক টায়ার নির্বাচন করা যায় এই পদ্ধতি জানতে সবাই আগ্রহী। টায়ার নির্বাচনে কি আসলেই কোন নিয়ম আছে? যেহেতু প্রশ্নটা সঠিক টায়ার নির্বাচনের সেক্ষেত্রে অবশ্যই কিছু বিশেষ নিয়ম বা পদ্ধতি থাকবেই। আমাদের আজকের আলোচনা বাইকের সঠিক টায়ার নির্বাচন নিয়ে। ঠিক কি কি কারণে টায়ার সঠিক হতে পারে সেটাই জানার চেষ্টা করবো এই আলোচনার মাধ্যমে।

টায়ারের নির্বাচনে টায়ারের নির্দিষ্ট সাইজ, ঘুর্নন দিক, সর্বোচ্চ লোড, TWI, সর্বোচ্চ গতি এগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

টায়ারের সাইজ :
প্রতিটি টায়ারের এক নির্দিষ্ট সাইজ রয়েছে। আর এই সাইজের পরিমাপ করা হয় দুইভাবে। প্রথমত এটি চওড়া কতটুকু, আর দ্বিতীয়ত এর ব্যাসার্ধ কতটুকু। যেমন কোন টায়ারে যদি লেখা থাকে ৩.২৫-১৮ এর অর্থ হলো টায়ারটি ৩.২৫ ইঞ্চি মোটা এবং এর ব্যাস ১৮ ইঞ্চি। আবার কখনও লেখা থাকে ১১০/৯০-১৭, এর অর্থ টায়ারটি ১১০মিলিমিটার চওড়া, ৯০মিলিমিটার উচ্চতা ও ব্যাস ১৭ ইঞ্চি।

সর্বোচ্চ লোড :
প্রতিটি টায়ারের লোড নেবার একটি সর্বোচ্চ ক্ষমতা রয়েছে। টায়ারের গায়ে সেটি লেখা থাকে। অতিরিক্ত লোড বহন করলে টায়ার গরম হয়ে ক্ষয় হয়ে যায় এমনকি ফেটে যেতে পারে। টায়টাটুবকিআটায়ারের লোড ক্ষমতা বিশেষ নম্বর দিয়ে বলে দেয়া থাকে বা অনেক টাযারে সরাসরি উল্লেখ থাকে। যেমন ৩০ মানে তার ধারন ক্ষমতা ১০৬ কেজি, ৪০ মানে তার ধারন ক্ষমতা ১৪০ কেজি, বা ৯০ মানে তার ধারন ক্ষমতা ১৬০ কেজি।

TWI :
আপনি যখন আপনার বাইককে পিক লেভেলে নিয়ে যাবেন ক্ষয়ে যাওয়া টায়ার তা সহ্য না করার সম্ভাবনাই বেশী । আপনার চোখে টায়ার ভালো মনে হলেও অধিকাংশ টায়ার কোম্পানিই তাদের টায়ারে সেফটি মার্ক ( tire/tread wear indicator ) দিয়ে থাকে যা দেখে সহজেই বুঝা যায় টায়ার বদলানোর সময় হয়েছে।

Tire wear indicator (TWI) হোল টায়ারের দুই বিটের মাঝে সামান্য উঁচু হয়ে থাকা একটা ছোট রাবার। প্রায় সব ধররনের টায়ারেই এই TWI থাকে। আপনাকে শুধু খুঁজে নিতে হবে। সহজে খুঁজে পাবার জন্য টায়ারের সাইড ওয়ালে TWI লেখা থাকে বা এ্যারো মার্ক করে দেয়া হয় । নতুন টায়ারে খুঁজে পেতে একটু কষ্ট হয় কিন্তু টায়ার কিছু পুরাতন হলে সহজেই দৃষ্টি গোচর হয়। টায়ার ক্ষয়ে নির্দেশক বিট বরাবর হয়ে গেলেই টায়ার পাল্টানোতে আর দেরী করা যাবে না।

টায়ার ঘুর্নন দিক :
রীম বা হুইলে টায়ার লাগানোর নির্দিষ্ট পদ্ধতি রয়েছে। কেননা টায়ারের বিট/থ্রেড এর ডিজাইন করা হয় টায়ারের সামনে ঘুরবে সেইভাবে। টায়ারটি কোনদিকে ঘুরবে তার জন্য একটি দিক নির্দেশক তীরচিহ্ন রয়েছে টায়ারের গায়ে।

সর্বোচ্চ গতি :
বাইক ভেদে টায়ারের ধরনও আলাদা। একটি টায়ার সর্বোচ্চ কত গতিতে চলতে পারবে তা তার গায়ে উল্লেখ থাকে। যেমন B মানে এই টায়ারের সর্বোচ্চ গতিসীমা ৫০কিমি/ঘন্টা, J মানে ১০০কিমি/ঘন্টা অথবা Z থাকলে বুঝতে হবে ২৪০কিমি/ঘন্টা বা তারও অধিক।

টিউবলেস টায়ার :
বর্তমানে রাস্তাঘাটে আপনারা যেসব বাইক দেখেন তার অধিকাংশই টিউবলেস টায়ার। টিউবলেস বলতে বুঝায় এর ভিতর কোন টিউব থাকে না, বাতাস এর টায়ার ও রিম ধরে রাখে। যেহেতু আপনি প্রচলিত টিউব টায়ার সম্পর্কে যথেষ্ট পরিচিত তাই আবার সেই ব্যাপারে আর আলোচনা না করে দেখা যাক টিউবলেস টায়ার গুলোর উপকারিতা কি। টিউবলেস টায়ার হাই স্পিড অন ট্র্যাক বাইকগুলোর জন্য ভালো। চলুন জানা যাক উপকারিতা গুলো –

১. টিউব, রিম বা স্পোক জন্য কোন রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন পরে না।

২. সেলফ সেলিং সম্ভব।

৩. এ ধরনের টায়ারের টিউবের কোন প্রয়োজন নেই।

৪. এ টায়ারের লিকেজ সহজে মেরামত করা সম্ভব। এবং মাঝেমধ্যে হুইল খোলার কোন প্রয়োজন নেই।

৫. হাই স্পিডে টায়ার চেপটা হয়ার কোন সুযোগ নেই যেটা কিনা বাইক স্কেডিং ও দুর্ঘটনা থেকে বাঁচায়।

টিউব টায়ার : চলুন জানা যাক টিউব টায়ারের উপকারিতা :

১. টিউব টায়ার অনেক সহজলভ্য।

২. টিউব টায়ারের মেইন্টেনেন্স খরচ খুব কম।

৩. টিউব টায়ার বাইকের রিমের সাথে ফিট থাকে।

৪. টিউব টায়ার খারাপ হলে খুব সহজেই রিপেয়ার করা সম্ভব।

কেমন টায়ার ভালো :
স্পোক রিম গুলো ওজনে হালকা ও কম দামে পাওয়া যায় এবং হেভি ডিসটরসনও মেরামত সম্ভব। কিন্তু স্পোক জয়েন্ট ও টায়ার বেড গুলোতে সহজে জং ধরে যায় এবং টিউব ও টায়ারের দ্রুত লিকেজ করে। অন্য দিকে অ্যালোয় রিম সামান্য ভারী, বেশি দামের ও ভারী চাপ সহ্য করতে পারে কিন্তু এর প্রতিরোধ ক্ষমতা কম এবং মেরামতযোগ্য নয়। কিন্তু এটি টায়ারকে ভালভাবে বেঁধে রাখে। আপনি রিম এর কোন রক্ষণাবেক্ষণ ছাড়াই অনেকদিনের জন্য টিউব বা টিউবলেস টায়ার ব্যবহার করতে পারবেন।

টায়ার নির্বাচনে টায়ারের উৎপাদনের সময় একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। উৎপাদনের সময়ের উপর ভিত্তি করে টায়ার নির্বাচন করতে হয়। চলুন জেনে নেওয়া যাক উৎপাদনের সময় ঠিক কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে টায়ার নির্বাচনে।

টায়ারের উৎপাদনের সময় :
আপনি যদি নিয়মিত বাইক চালান স্বাভাবিক নিয়মেই টায়ার ক্ষয়ে যাবে । কিন্তু বাইক যদি না চালিয়ে ফেলে রাখেন বা কম চালান ? আপাত দৃষ্টিতে মনে হতে পারে টায়ার ভালো আছে কিন্তু UV রেডিয়েশান, ওজন এমন কি অক্সিজেন পর্যন্ত আপনার টায়ারের ক্ষতি সাধন করে থাকে যা খালি চোখে আপনি দেখতে পাবেন না। এক কথায় টায়ারের বৃদ্ধ হয়ে যাওয়া। টায়ারের বৃদ্ধ হয়ে যাওয়া বা tire’s age সম্পর্কে আপনার ধারণা থাকা জরুরী । বেশীর ভাগ এক্সপার্টই একমত হন যে কম চালানোর কারণে টায়ার ভালো থাকলেও ৬ বছরের অধিক একটি টায়ার ব্যবহার করা উচিৎ না। এরপরে টায়ার বদলে ফেলাই বুদ্ধিমানের কাজ। এবং এক্ষেত্রে আপনি কবে টায়ার কিনেছেন তা গুরুত্তপূর্ন না বরং কবে টায়ার তৈরি হয়েছে তাকে গুরুত্ত দিন । প্রতিটি টায়ারের গায়ে উৎপাদন তারিখ লিখা থাকে। টায়ারের উৎপাদন তারিখ টায়ার ওয়ালে চার ডিজিটে উল্লেখ থাকে। প্রথম দুটি দিয়ে সপ্তাহ এবং পরের দুটি দিয়ে বছর বুঝানো হয় । যেমন ধরুন 0614 মানে ২০১৪ সালের ষষ্ঠ সপ্তাহে টায়ারটি তৈরি হয়েছে। এর পাশাপাশি সূর্যের আলো এবং অতিরিক গরম হলেও টায়ারের ক্ষতি হতে পারে। টায়ারের গায়ে অনেক সময় সুক্ষ ফাটল দেখা যায় এগুলি হয় SUN rot এর কারণে । আবহাওয়া গত বা বয়স গত কারণে টায়ারের ক্ষয়কে ছোট করে দেখবেন না ।

উপরের আলোচনা থেকে আমরা জানলাম সঠিক টায়ার নির্বাচনের উপায়। এই পয়েন্টগুলো যদি আমরা খেয়াল করে বা সচেতন হয়ে টায়ার নির্বাচন করি তবে সেটা অবশ্যই আমার জন্য সুবিধাজনক। কারণ এর জন্য আর বিভ্রান্তিতে পড়তে হবে না। কাজেই লোক মুখে শোনা কথায় গুরুত্ব না দিয়ে আপনি নিয়ম বুঝে আপনার বাইকের জন্য উপযোগী এমন টায়ার নির্বাচন করুন।