ফুয়েল ইঞ্জেকশন ইঞ্জিন কিভাবে কাজ করে?

আগস্ট 03, 2019

ফুয়েল ইঞ্জেকশন ইঞ্জিন কিভাবে কাজ করে?
আমরা যারা মোটর সাইকেল বা বাইক চালাই সবারই ইঞ্জিন নিয়ে মোটামুটি ধারণা রয়েছে। এবং আমরা জানি প্রায় সব ধরনের ইঞ্জিনের জন্য গ্যাসোলিনের প্রয়োজন হয়। কিন্তু অনেকেই আবার জানি না শুধুমাত্র গ্যাসোলিন অথবা ফুয়েল দিয়ে একটি ইঞ্জিন পরিচালনা করা কোন ভাবেই সম্ভব হয় না। গ্যাসোলিনের সাথে বাতাস মিশ্রিত হয়ে ইঞ্জিনের অন্তর্দহন বা অভ্যন্তরীণ জ্বলনের সৃষ্টি হয়। এবং এই জ্বলনের সাথে যোগ হয় তাপ।

আমরা যারা মোটর সাইকেল বা বাইক চালাই সবারই ইঞ্জিন নিয়ে মোটামুটি ধারণা রয়েছে। এবং আমরা জানি প্রায় সব ধরনের ইঞ্জিনের জন্য গ্যাসোলিনের প্রয়োজন হয়। কিন্তু অনেকেই আবার জানি না শুধুমাত্র গ্যাসোলিন অথবা ফুয়েল দিয়ে একটি ইঞ্জিন পরিচালনা করা কোন ভাবেই সম্ভব হয় না। গ্যাসোলিনের সাথে বাতাস মিশ্রিত হয়ে ইঞ্জিনের অন্তর্দহন বা অভ্যন্তরীণ জ্বলনের সৃষ্টি হয়। এবং এই জ্বলনের সাথে যোগ হয় তাপ। অভ্যন্তরীণ দহন বা অন্তর্দহন তৈরি হয় তিনটি জিনিসের উপর ভিত্তি করে। এই তিনটি জিনিস ছাড়া অন্তর্দহন সম্ভব না। যদি তিনটির মধ্যে একটিও না থাকে তবে এদের মধ্যে রাসায়নিক বিক্রিয়া সংঘটিত হবে না এবং ইঞ্জিনের অন্তর্দহন সংঘটিত হবে না। তাই ইঞ্জিন সচল রাখতে শুধুমাত্র গ্যাসোলিন হলেই হয় না, প্রয়োজন হয় তাপ ও বায়ুরও।

ফুয়েল ইঞ্জেকশন ইঞ্জিন কি? :
সাধারণত ফুয়ল ইঞ্জেকশন ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয় ইঞ্জিন শক্তিশালী করার জন্য। ইদানীং আমরা প্রায়ই সকল ইঞ্জিনেই ফুয়েল ইঞ্জেকশন লক্ষ্য করে থাকি। এর কারণ হলো ফুয়েল ইঞ্জেকশন ইঞ্জিন মোটর সাইকেল কিংবা বাইককে ঠান্ডা হওয়ার অবস্থা থেকে সহজেই রক্ষা করতে সক্ষম। এবং ঠান্ডার সময় দেখা যায় বাইকে স্টার্ট নিয়ে সমস্যা হয় কিংবা স্টার্ট হয় না। কিন্তু এই ফুয়েল ইঞ্জেকশন এই সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়। ফুয়েল ইঞ্জেকশনে অন্তর্দহনের জন্য একটি আলাদা কার্বুরেটর থাকে এবং ফুয়েল ইঞ্জেকশনের উচ্চ চাপের কোন প্রয়োজন হয় না। কারণ ফুয়েল পাম্প করে ইঞ্জেক্টরের নজেলের দিকে নিয়ে যায় এবং নজেল ফুয়েলকে অটোমাইজ করে দেয়। আবার এই অটোমাইজ ফুয়েলকে বাষ্পে রূপান্তরিত করে থাকে এবং একই সাথে বাতাসের সাথে মিশ্রিত করে তাপের মাধ্যমে অন্তর্দহনের তৈরি করে থাকে।

ফুয়েল ইঞ্জেকটেড ইঞ্জিন এ ফুয়েল ফিডিং সিস্টেম ইলেকট্রিক ভাবে কাজ করে আর এটার নাম হল ইলেকট্রনিক ফুয়েল ইঞ্জেকশন সিস্টেম। এখানে কম্বাসটেশন চেম্বারে ফুয়েল ফিডিং সিস্টেম কাজ করে ইলেকট্রনিক্যালি কন্ট্রোল ইঞ্জেকটর এর মাধ্যমে। এখানেও ইন্টেক মেইন ফোল্ড কাজ করে এয়ার সাকড এর মাধ্যমে এবং ফুয়েল স্প্রে বা ইঞ্জেকটেড করা হয় নির্দিষ্ট ডিভাইসে। এটা মাঝে মাঝে মেইনফোল্ড এ স্প্রে বা মাঝে মাঝে সরাসরি কম্বাসটেশন চেম্বারে দেওয়া হয়।

তাই ফুয়েল ও ইঞ্জেকশন টাইমিং কন্ট্রোল করে ইলেকট্রনিক ডিভাইস যেটার নাম হল ইলেকট্রনিক কন্ট্রোল ইউনিট বা ইসিইউ। এখানে ইঞ্জিন টেম্পারচার, অক্সিজেন লেভেল, এয়ার ইনটেক ও থ্রোটল বাটারফ্লাই পজিশন এ মাপার জন্য সেন্সর এর সাথে যুক্ত।

তাই ফুয়েল ইঞ্জেকটেশন সিস্টেম হল হাই-টেক ও সহজ ফুয়েল ফিডিং সিস্টেম। এই মর্ডান টেকনোলজি ডিভাইস এর সাথে যুক্ত হয়ে মর্ডান মোটরসাইকেল এর ইঞ্জিনকে আরো উন্নত করছে এবং দক্ষতা বাড়িয়ে তুলছে।

ফুয়েল ইঞ্জেকশন ইঞ্জিন কিভাবে কাজ করে? :
ফুয়েল ইঞ্জেকশন সিস্টেমকে একটি কম্পিউটার প্রোগ্রাম দ্বারা নিয়ন্ত্রিত করা হয়। ফুয়েল ইঞ্জেকশন ইঞ্জিনে ফুয়েল পাম্প করে ট্যাঙ্কের ভিতর থেকে প্রবাহিত হয়। এই ফুয়েল, ফুয়েল লাইন দিয়ে প্রবাহিত হয়, প্রবাহিত হওয়ার আগে সম্পূর্ণ ভাবে ফিল্টার হয়ে আসে। একটি ফুয়েল রেগুলেটরের মাধ্যমে চাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং এর পরিমাণ ও নির্ধারণ করে থাকে। ইসিউ বা ইঞ্জিন কন্ট্রোল ইউনিট যেটাকে বলে সেটা দ্বারা নির্দেশ করা হয় কি পরিমাণ ফুয়েল সিলিন্ডারে যাবে বা প্রবেশ করবে। আর এই ফুয়েল প্রবেশ করার জন্য ঠিক কত সময় ধরে ইঞ্জেক্টরের মুখ খোলা থাকবে সেটাও ঠিক করে। সাধারণ ভাবে এই ইঞ্জিন কন্ট্রোল ইউনিট বা ইসিউ নির্ধারণ করে কখন ফুয়েলে প্রবাহ বন্ধ হবে। আবার এই ইসিউ এর নির্দেশে ভাল্বেও প্রবেশ করে। এবার এই সলিনয়েড ভাল্বের দ্বারা একটি চৌম্বকীয় অবস্থার তৈরি হয় এবং একটি তড়িৎ চৌম্বক প্লাগের সাথে লাগানো থাকে। যার ফলে ফুয়েলের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য হয় এবং খুব সহজেই প্রবাহ নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। ইঞ্জিন কন্ট্রোল ইউনিটকে ভোল্টেজ সেন্সর, ম্যাস এয়ারফ্লো সেন্সর, অক্সিজেন সেন্সর এবং প্রেশার সেন্সর তথ্য দিয়ে সাহায্য করে যে কি পরিমাণ ফুয়েল প্রবাহিত করতে হবে। ইসিউ বা ইঞ্জিন কন্ট্রোল ইউনিট মোটর সাইকেল বা বাইকের স্পীড নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়া বাইক যখন থেমে থাকে বা বাইক থেমে থাকা অবস্থায় এটি স্পীডের সিগন্যাল থ্রটলে প্রেরণ করে।

ইদানীং অধিকাংশ বাইকারই ইগনিশনে চাবি দিয়ে বাইকে চড়ে বসে কোনো ঝামেলা ছাড়াই টান দেন—এটা সম্ভব হয়েছে ফুয়েল ইঞ্জেকশন ইঞ্জিনের ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা দূর হওয়ায়। অবশ্য টেকনিকালি ব্যাখ্যা করতে গেলে বিষয়টি বেশ জটিল।

প্রথমত, এক্ষেত্রে জ্বালানি ট্যাঙ্কের ভিতর একটি পাম্প থাকে, আরো থাকে একটি ইলেকট্রনিক ইঞ্জিন কন্ট্রোলার ও বেশকিছু সেন্সর। এবার সহজ ভাষায় যদি আবারও বলি, ফুয়েল ইঞ্জেকশন সিস্টেমকে একটি কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত জ্বালানি সরবরাহ সিস্টেম দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এক্ষেত্রে ইসিইউ বিভিন্ন সেন্সর থেকে তথ্য সংগ্রহ করে এবং সেই তথ্যের ভিত্তিতে ইঞ্জিনে জ্বালানি সরবরাহ করে।

অন্য সেন্সরগুলো আরপিএম, ইঞ্জিনের তাপমাত্রা, থ্রটল পজিশন ও ক্র্যাঙ্কশ্যাফট পজিশন নিয়ন্ত্রণ করে। আবার, ইঞ্জিন লোড ও বিভিন্ন আরপিএমে কী পরিমাণ জ্বালানি প্রয়োজন সেটাও ইসিইউ-এর ফুয়েল ম্যাপে উল্লেখ করা থাকে। ফলে একবার প্রয়োজনীয় জ্বালানির পরিমাণ নির্ধারিত হয়ে গেলে ইসিইউ নিজে থেকেই জ্বালানি ও বায়ুর মিশ্রণের অনুপাত ঠিক করে নেয়। কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত ইলেকট্রনিক ফুয়েল ইঞ্জেকশন সিস্টেমে একটি কম্পিউটার, অক্সিজেন সেন্সর, এক সেট ফুয়েল ইঞ্জেক্টর, ফুয়েল প্রেসার রেগুলেটর ও একটি ইলেকট্রিক ফুয়েল পাম্প থাকে। চাবি দিলেই ইসিইউ চালু হয়ে যায় এবং বাইক চলার জন্য সবকিছু প্রস্তুত করে নেয়। কার, ট্রাক ও অন্যান্য আধুনিক যানবাহনের ইঞ্জিনের মতো বাইকের ইঞ্জিনের ফুয়েল ইঞ্জেকশনও একইভাবে কাজ করে।

ইঞ্জিন কন্ট্রোল ইউনিট বা ইসিইউ হিসেবে পরিচিত একটি ক্ষুদ্র কম্পিউটার বৈদ্যুতিক পদ্ধতিতে ইঞ্জিনের ফুয়েল ইঞ্জেকশন নিয়ন্ত্রণ করে। কম ধোঁয়া উৎপাদন, শক্তির অপচয় কমানো ও অধিক অ্যাক্সিলারেশন নিশ্চিত করতে ইঞ্জিনে কতোখানি ফুয়েল ইঞ্জেক্টর থেকে প্রবেশ করবে সেটা থ্রটল, আরপিএম, বায়ু ও ইঞ্জিনের তাপমাত্রা এবং ক্র্যাঙ্কশ্যাফটের অবস্থান প্রভৃতি ভ্যারিয়েবলের ভিত্তিতে ইসিইউ নির্ধারণ করে।

প্রায় নির্দ্বিধায় আশা করা যায় যে, অদূর ভবিষ্যতে সব বাইকেই কার্বুরেটরের পরিবর্তে ইএফআই বা ফুয়েল ইঞ্জেকশন প্রযুক্তি চলে আসবে। কারণ দিনকে দিন ধোঁয়া নির্গমনের ব্যাপারে দেশগুলো কঠোর সব আইন জারি করছে। তবে এটাও ঠিক যে ইএফআইয়ের দাম অনেক কমে আসলেও অধিকাংশ লোকই কার্বুরেটরই ব্যবহার করতে চাইবে। কারণ ভালো মানের একটি কার্বুরেটর অত্যাধুনিক ইএফআইয়ের চেয়ে সর্বসাকুল্যে ১০ শতাংশ কম শক্তি উৎপাদন করতে পারে। আর ইএফআইয়ের খরচের বিষয়টি মাথায় রাখলে এটা তেমন কোনো ব্যাপারই নয়।