হাইওয়ে রাইডিং টিপস

আগস্ট 10, 2019

হাইওয়ে রাইডিং টিপস

হাইওয়েতে বাইক বা মোটর সাইকেল চালানো অনেকের কাছেই একটি ভয়ংকর ব্যাপার। এর কারণ হলো খরবের কাগজ, টেলিভিশনের সামনে বসলেই দেখা যায় হাইওয়েতে সড়ক দুর্ঘটনায় মোটর সাইকেল আরোহীর মৃত্যুর খবর। কিন্তু আমরা কি জানি এই মৃত্যুর পেছনের গল্পটা? কত জন হাইওয়েতে সঠিক নিয়ম মেনে বাইক বা মোটর সাইকেল চালান? কিন্তু এর চেয়েও বড় ব্যাপার কত জন হাইওয়েতে বাইক চালানোর নিয়ম সম্পর্কে জানেন বা ধারণা রাখেন? চলুন আজ একটি আলোচনার মাধ্যমে জানা যাক হাইওয়েতে বাইক রাইডের সঠিক নিয়ম সম্পর্কে।

হাইওয়েতে মোটর বাইক রাইড দেবার সঠিক নিয়ম :

রাইডিং গিয়ার্স :
বাইক চালানোর সময় যথাযথ রাইডিং গিয়ার পরিধান করতে হয়। আপনি কোন বাইক চালাচ্ছেন এটা কোন বিষয় নয়। বর্তমান সময়ে যে কোন বাইক হাইওয়েতে কমপক্ষে ৬০ কিলো মিটার গতিতে চলে। কিন্তু এই গতিতে যদি হাইওয়েতে আপনার একটি এক্সিডেন্ট হয় তবে আপনার বড় ধরনের ইনজুরি হবে এটা নিশ্চিত। অনেকেই যাত্রা বেলায় অবহেলা করে যাত্রার জন্য নির্দিষ্ট ড্রেস পড়তে চান না বা পড়েন না। কিন্তু এই অবহেলাই কিন্তু দুর্ঘটনার ঝুঁকি আরো বাড়িয়ে দেয়। হাইওয়েতে যাত্রা বেলায় জুতা, হেলমেট, গ্লাভস, রাইডিং জ্যাকেট এবং এলবো ও নি গার্ড এগুলো পড়া বাধ্যতামূলক। আপনার যাত্রা যতই ছোট হোক না কেন এগুলো পড়ার বিকল্প নেই। এছাড়া এটাও ঠিক যে রাইডিং গিয়ার খুবই কুল লুকিং। কাজেই এটা নিয়ে অতিরিক্ত মাথা ব্যথার কিছু নেই।

সার্ভিসিং :
বাইক নিয়ে হাইওয়েতে রাইড দেওয়ার আগে নিশ্চিত হতে হবে আপনার মোটর সাইকেল বা মোটর বাইক রাইড দেওয়ার জন্য পারফেক্ট কি না। নিশ্চিত হয়েই তবে রাইডে বের হতে হবে। বাইকের ফুয়েল যথেষ্ট পরিমাণে আছে কি না চেক করে নিতে পারে। একই সাথে বাইকের চেইন পরিষ্কার না থাকলে পরিষ্কার করে নিতে হবে। চাকা আর প্রেশার ঠিক আছে কি না এটাও দেখতে হবে। এছাড়া হাইওয়েতে বাইক রাইড দেওয়ার জন্য লুকিং গ্লাস, ইলেকট্রিক্যাল সিস্টেমসের মধ্যে যা পড়ে যেমন হেড লাইট, টেইল লাইট, ইনডিকেটর এগুলো দেখে নিতে হবে। হাইওয়েতে গেলে এমনিতেই বাইকাররা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি গতিতে বাইক চালান। তাই বাইক পারফেক্ট আছে কি না এ ব্যাপারটা জেনে নেওয়া জরুরী। আর এই চেক আপেই অনেকের অলসতা। কিন্তু অলসতা না করে এগুলো চেক করে নেওয়া জরুরী। এটা আপনার নিরাপদের জন্য, এটা আপনার যাত্রাকে আরো সহজ করার জন্য।

যাত্রাপথে হেডফোন বা লাউড মিউজিক থেকে বিরত থাকা :
আমরা প্রায়ই খেয়াল করি রাস্তায় বের হলে বাইক রাইডাররা কানে হোডফোন লাগিয়ে কিংবা লাউড মিউজিক শুনে বাইক রাইড দিয়ে থাকেন। কিন্তু এটা কোন ভাবেই উচিত নয়। ইয়ার ফোন বা হেড ফোন অন্য সব সাউন্ডকে অস্পষ্ট করে দেয়। অনেক সময় পেছন থেকে আসা গাড়ির হর্ণ পর্যন্ত শোনা যায় না। আর এ কারণেই বড় ধরনের দুর্ঘটনা হতে পারে। কাজেই যাত্রার সময় হেডফোন বা লাউড মিউজিক শোনা থেকে বিরত থাকতে হবে।

সবসময় রাস্তার দিকে নজর রাখতে হবে :
“মোশন ইন্ডিউসড ব্লাইন্ডনেস” নামে একটা অসুখ আছে যেটা সম্পর্কে অনেক কম মানুষেরাই জানেন। সহজ করে বোঝাতে গেলে বলতে হয় একজন রাইডার যখন হাইওয়েতে খুব মনোযোগ দিয়ে শুধু রাস্তার উপরে থাকেন তখন তার দুই পাশে কি চলছে সেদিকে খেয়াল থাকে না। যেমন কেউ যদি রাস্তার ওপাশ দিয়ে আসে তবে সেটা দেখতে পারবেন না। আবার কেউ যদি রাস্তার অন্য পাশ থেকে যদি যেকোনো ধরণের কোন প্রাণীও আসে তবে সেটাও দেখতে পারবেন না। তখনই মনে হবে কেউ ওপাশ থেকে দূরে আসছে। তখনই ঐ দিকে মনোযোগ দিলে আপনার বড় কোন দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।
হাইওয়েতে বাইক রাইডিং এর ক্ষেত্রে গতির উপর নিয়ন্ত্রণ রাখাটা অনেক বড় একটা গুরুত্বের ব্যাপার। অনেক দক্ষ চালক ও ঝোঁকের মাথায় গাড়ির স্পিড নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে গিয়ে নিজের জীবনই হারাতে হয়েছে।

অধিক গতি ও প্রতিযোগিতা পরিহার করা
সরকার থেকে গতিসীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তার উপর কোনও বল প্রয়োগ করা হয় না। কখনও কখনও সর্বোচ্চ গতিসীমা এতটাই কম যে আমরা দেখে তা হাসির বস্তুতে পরিণত করি। তাই এমন রাস্তায় আপনি কত জোরে যাবেন তা নির্ভর করে আপনার উপরে। কিন্তু নিজের ইচ্ছে মত গতিতে চালিয়ে প্রতিযোগিতায় জড়িয়ে পড়েন রাইডাররা। যার ফলে ঘটে অনেক দুর্ঘটনা।

ঘুম পেলে অবিলম্বে থেমে যাওয়া :
বাইক চালাতে গিয়ে বা লং ড্রাইভে গেলে অনেক সময় চোখে ঘুম চলে আসে। চোখে ঘুম নিয়ে বাইক চালানো কোন ভাবেই উচিত নয়। চোখে ঘুম থাকলে যেকোনো সময় যেকোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। কাজেই চোখ ঘুম নিয়ে বাইক চালানো উচিত নয়।

লুকিং গ্লাসে নিয়মিত চোখ রাখা :
হাইওয়েতে বাইক চালানোর সময় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় কিছুক্ষণ পরে পরে লুকিং গ্লাসে খেয়াল রাখা। নিয়ম অনুযায়ী মিনিটে ৬ থেকে ৮ বার লুকিং গ্লাসে চোখ রাখতে হয়। এতে করে দুর্ঘটনার সম্ভবনা কম থাকে।

তাই, খুব সতর্ক ভাবে রাস্তার মাঝে বাইক চালাতে চেস্টা করুন প্রয়োজনীয় গতি নিয়ে নিন।

অনেক সময় রাস্তার মাঝে ছোট খাট কিছু গর্ত থাকে লম্বা দাগ ধরণের এসব ভাঙ্গা অংশ দেখে মনে হয় তেমন কিছু সমস্যা করবেনা, কিন্তু এগুলো মাঝে মাঝে ভালো বিপত্তি ঘটিয়ে দিতে পারে।

যেমন ধরুন এই লম্বা দাগ গুলোর মাঝে আপনার বাইকের চাকা পরে গিয়ে বাইকের কন্ট্রোল চলে যেতে পারে মুহূর্তের মাঝেই। তাই খুব সতর্ক থাকুন এসব ছোট খাটো ব্যাপারে সাবধান হউন এবং অবশ্যই অপরিচিত রাস্তায় বাইক ভালোভাবে চালান নির্দিষ্ট স্পীড এ যা আপনার আয়ত্তের মাঝেই থাকবে এবং অপ্রীতিকর অবস্থায়ও যেন আপনি বাইক কন্ট্রোল করে নিতে পারেন সে জন্য।

নদীর উপর নির্মিত সেতু কিংবা বড় ধরণের ব্রিজের মাঝে বাতাসের চাপ থাকে অনেক বেশি এবং অনেক এলোমেলো। তাই, আপনার বাইকের যদি নিয়ন্ত্রণ জনিত সেই বাতাসের চাপে তবে সাবধানে নিয়ন্ত্রণ যোগ্য গতিতে বাইক চালানই ভালো যদিও এখনের সকল বাইকই প্রায় আধুনিক ভাবে এরো ডিজাইন সম্বলিত তার পরেও সাবধান থাকুন এই ব্যাপারে। অনেক বাইক রাইডার এর কাছেই শুনেছি যে, হাইওয়ের মাঝে অনেক সময় দেখা যায় যে বড় দুরপাল্লার বাস কিংবা ট্রাক গুলো ওভারটেক করার প্রতিযোগিতা শুরু করে। অনেক জায়গায়ই ওদের এসব কারনে সাধারণ অনেক বাইকার কিংবা পথচারীর মৃত্যুর খবর অবশ্যই আপনি শুনে থাকবেন। তাই এরকম পরিস্থিতির সম্মুখীন হলে নিজের মত নিরাপদ অবস্থানে থাকুন। কখনই আগ বাড়িয়ে আপনি ওভারটেক করতে যাবেন না ।

আপনার সামনে পিছনে কি ধরণের যানবাহন চলছে তাঁদের গতি কেমন কিংবা কিভাবে চালাচ্ছে তা সবসময় কিন্তু আপনাকে ফলো করতে হবে।

কারণ, আপনার সাথে চলাফেরা করা সবগুলো যানবাহনই আপনার সাথে একই রাস্তায় আছে এবং তাঁদের ও নির্দিষ্ট মাত্রার গতি এবং কন্ট্রোল ক্ষমতা আছে।

অনেক সময় পাশে থাকা গাড়ির কন্ট্রোল হারিয়ে আপনার বাইকে এসে ঠুকে দিতেই পারে, এটা অস্বাভাবিক কিছুই নয়। তাই এ ব্যাপারেও যথেষ্ট সতর্ক থাকুন। এবং ভারী যানবাহনের পিছনে চলার সময় তাঁদের গতিবিধির উপর লক্ষ্য রাখুন। উন্মুক্ত ভাবে রড, বাঁশ বহনকারী গাড়ি গুলোর পিছনে অথবা সাইডে সাবধানে থাকুন।

উপরের আলোচনা থেকে আমরা জানলাম কিভাবে হাইওয়ে বাইক রাইডিং টিপস সম্পর্কে। হাইওয়েতে বাইক রাইডিং এর জন্য এই টিপসগুলো অতি গুরুত্বপূর্ণ। কাজেই এই টিপস ও নিয়ম মেনে হাইওয়েতে বাইক রাইড দিতে হয়।