সিনথেটিক নাকি মিনারেল, কোন ইঞ্জিন অয়েল উত্তম?

জুলাই 15, 2019

সিনথেটিক নাকি মিনারেল, কোন ইঞ্জিন অয়েল উত্তম?

আমাদের সবারই প্রাণ আছে। যার জন্য আমাদের প্রাণী বলা হয়। অন্যদিকে মোটর সাইকেল, গাড়ি এগুলোরও প্রাণ আছে যদিও তাদেরকে প্রাণী বলা হয় না। মোটর সাইকেল, গাড়ি এগুলোর প্রাণ হলো ইঞ্জিন। জীবন ধারণ আর বেঁচে থাকার জন্য আমাদের প্রয়োজন হয় খাদ্যের। তেমনি গাড়ির ইঞ্জিনের প্রয়োজন হয় ইঞ্জিন অয়েলের। এটাই ইঞ্জিনের প্রধান খাদ্য। ইঞ্জিন অয়েল আবার কয়েক রকমের আছে। যেমন : সিনথেটিক, মিনারেল, সেমি সিনথেটিক ইঞ্জিন অয়েল। এখন গাড়ি বা মোটর সাইকেলের ইঞ্জিনের জন্য কোন ইঞ্জিন অয়েল ভালো এটা জানবো একটি আলোচনার মাধ্যমে।

মিনারেল অয়েল কি : প্রকৃতিতে থেকে নির্গত অপরিশোধিত তেলকে পরিশোধনের পর যদি গাড়ির ইঞ্জিন চালানোর জন্য যদি ব্যবহার করা হয় তবে সেগুলোকে মিনারেল ইঞ্জিন অয়েল বলায় হয়। তবে এই মিনারেল অয়েলে কোন ধরনের কেমিক্যাল যোগ করা হয় না। অর্থাৎ প্রকৃতিতে থেকে পাওয়া তেলকে ভালো ভাবে পরিশোধের পরে সেটাকে গাড়ির ইঞ্জিনের জন্য ব্যবহার করা হয়। ক্রুড অয়েল থেকে মূলত মিনারেল ইঞ্জিন পাওয়া যায়।

সিনথেটিক অয়েল :
গাড়ির ইঞ্জিনের সেরা এবং সর্বোচ্চ পারফরমেন্স নিশ্চিত করতে বা করার লক্ষ্যে যেসব তেল উচ্চ মাত্রার পরিশোধিত ও প্রয়োজনীয় রাসায়নিক কেমিক্যাল যুক্ত করে তৈরি করা হয়ে থাকে সে গুলোকেই সিনথেটিক অয়েল বলা হয়। সিনথেটিক অয়েলে কেমিক্যাল যুক্ত করার মূল কারণ হলো ইঞ্জিনের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করা।

সেমি সিনথেটিক অয়েল :
মিনারেল অয়েল আর সিনথেটিক অয়েলের পাশাপাশি বাজারে আরো একটি ইঞ্জিন অয়েল আছে যেটাকে সেমি সিনথেটিক অয়েল বলা হয়। আর এই অয়েল বলতে মূলত মিনারেল অয়েল আর সিনথেটিক অয়লের মিশ্রণকে বুঝানো হয়। এবার সহজ করে বললে এর সংজ্ঞা যেটা দাঁড়ায় তা হলো, যেসব ইঞ্জিন অয়েলে একই সাথে প্রাকৃতিক আর সিনথেটিক অয়েল দুটোই পাওয়া সম্ভব তাকে সেমি সিনথেটিক অয়েল বলা হয়। মূলত মিনারেল অয়েলের কার্যকারিতা বৃদ্ধির জন্য তার সাথে সিনথেটিক অয়েল যুক্ত করে সেমি সিনথেটিক অয়েল তৈরি করা হয়ে থাকে। তবে এই দুই ধরণের অয়েলের মিশ্রনের অনুপাতে সিনথেটিক অয়েলের পরিমান সর্বোচ্চ ৩০% । বাকি ৭০ ভাগ মিনারেল অয়েল।

কোন ইঞ্জিন অয়েল উত্তম সেটা জানার জন্য আমাদেরকে সব ইঞ্জিন অয়েলের সুবিধা আর অসুবিধা সম্পর্কে ধারণা নিতে হবে।

মিনারেল ইঞ্জিনের সুবিধা :

১. মিনারেল ইঞ্জিনের দাম অনেক কম। এতটাই কম যে গাড়ি বা মোটর বাইকের অন্যান্য জিনিসের তুলনায় এটা পানির মূল্যে বিক্রি হয়। আর এর প্রধান কারণ এই ইঞ্জিন অয়েল প্রাকৃতিক উপায়ে উত্তোলিত হয়।

২. মিনারেল ইঞ্জিন অয়েল অনেক সহজলভ্য। আর এর চেয়েও বড় কথা এটা সব জায়গায় পাওয়া যায়।

৩. অনেকেই চিন্তা করেন ইঞ্জিন অয়েল গাড়ির চাহিদা পূরণ করতে পারবে কি না। মিনারেল ইঞ্জিন অয়েল গাড়ির চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম। আর এই ইঞ্জিন অয়েলে কোন প্রকারের কেমিক্যাল থাকে না।

মিনারেল ইঞ্জিন অয়েলের অসুবিধা :

১. মিনারেল ইঞ্জিন অয়েল দীর্ঘস্থায়ী নয়। অর্থাৎ কিছুদিন পর পরই পাল্টাতে হয়।

২. মূলত ইঞ্জিন অয়েলে গাড়ির কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল থাকে। কিন্তু মিনারেল ইঞ্জিন অয়েলে কোন ধরনের কেমিক্যাল থাকে না।

৩. ইঞ্জিনের ভালো পারফরমেন্স সব সময় পাওয়া অসম্ভব।

৪. দ্রুতই ঘনত্ব হারিয়ে পাতলা হয়ে যায়।

৫. ইঞ্জিনের নকিং বাড়তে থাকে।

৬. উচ্চতাপ আর ঠান্ডায় এই মিনারেল ইঞ্জিন অয়েল সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না।

এবার সিনথেটিক অয়েলের সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে আলোচনা করবো।

সিনথেটিক অয়েলের সুবিধা :

১. অধিক ও উচ্চ তাপমাত্রায় কাজ করে কোন সমস্যা ছাড়াই।

২. অল্প ও ঠান্ডা তাপমাত্রায় অনেক বেশি কার্যকর।

৩. ঘর্ষণ ও নকিং হয় কম যার ফলে ইঞ্জিনের স্থায়িত্ব অনেক বাড়ে।

৪. সহজে পাতলা হয় না বিধায় বাষ্প হয়ে কমে যাওয়ার সুযোগ থাকে না।

৫. ইঞ্জিনে ময়লা জমতে দেয় না সিনথেটিক অয়েল। এবং ইঞ্জিন ডাস্ট ক্লিন রাখে।

৬. সিনথেটিক অয়েল ইঞ্জিন অনেক সময় ধরে কাজ করে।

৭. এই সিনথেটিক অয়েল সর্বোচ্চ পরিমাণে পরিশোধিত হওয়ায় কোন ক্ষতিকারক কেমিক্যাল থাকে না।

সিনথেটিক অয়েলের অসুবিধা :

১. মিনারেল অয়েলের চেয়ে সিনথেটিক অয়েলের মূল্য অনেক বেশি।

২. মিনারেল অয়েল নিয়ে সবাই কম বেশি সচেতন হলেও সিনথেটিক অয়েল সম্পর্কে সবাই সচেতন না। যার জন্য বিতর্কের সৃষ্টি হয় প্রতিনিয়ত।

৩. কম সিসির গাড়ি বা মোটর বাইকে এই সিনথেটিক অয়েল ব্যবহার করা অনেক ব্যয়বহুল। আবার অনেকেই এ ব্যাপারটাকে বিলাসিতা হিসেবে দেখেন।

৪. জরুরী প্রয়োজনে সব জায়গায় সিনথেটিক অয়েল পাওয়া যায় না। কেননা সব জায়গায় এর চাহিদা ভালো না হওয়ায় পাওয়া সম্ভব হয় না।

এবার আমরা জানবো একটি আদর্শ ইঞ্জিন অয়েল কেমন হয়ে থাকে। আর গাড়ি বা মোটর বাইকের জন্য কেমন ইঞ্জিন অয়েল প্রয়োজন।

* গাড়ির সর্বোচ্চ কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই সিনথেটিক ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করা উচিত।

* সিনথেটিক ইঞ্জিন অয়েল অনেক ব্যয়বহুল আর একইসাথে আপনার গাড়ির সিসি কম হলে মিনারেল ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করা উচিত।

* আপনার গাড়িটি যদি নিয়মিত ট্রিপ দিয়ে থাকে এবং অনেক সময় ধরে ব্যবহার হয়ে থাকে তবে গতানুগতিক তেল ইঞ্জিনের অতিরিক্ত ময়েশ্চার পুরোপুরিভাবে পুড়িয়ে ফেলতে পারে না। এক্ষেত্রে সিনথেটিক অয়েল ব্যবহার করা ভালো বলে মনে করেন গাড়ি ও মোটর বাইকের ইঞ্জিনিয়ারেরা।

* অনেকের অভিযোগ প্রয়োজনে সিনথেটিক অয়েল পাওয়া যায় না। সিনথেটিক অয়েলের চেয়ে মিনারেল ইঞ্জিন অয়েল সব জায়গায় পাওয়া যায়। যেহেতু মূল্য অনেক কম আর সব জায়গায় পাওয়া যায় কাজেই নিয়মিত মিনারেল ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করা যায়।

* পরিবেশের কথা চিন্তা করলে সিনথেটিক ইঞ্জিন অয়েল ভালো। আবার মিনারেল ইঞ্জিন অয়েল যে খুব বেশি খারাপ এমনটাও না। তবে সিনথেটিক ইঞ্জিন অয়েল একটু ভালো করে পরিশোধিত করা হয় আর এর জন্য ক্ষতিকারক কোন কেমিক্যাল থাকে না।

সিনথেটিক ইঞ্জিন অয়েল না কি মিনারেল ইঞ্জিন অয়েল, এই বিতর্ক চলে আসছে আজ অনেকদিন। কিন্তু বিতর্কে অংশ নেওয়ার আগে সঠিক ধারণা থাকা আবশ্যক। না হলে ভালো মন্দ বিচার করবেন কিভাবে। অনেকের দৃষ্টিতে সিনথেটিক ইঞ্জিন অয়েলের বিকল্প নেই। কিন্তু এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। গাড়ি বা মোটর বাইক অনুযায়ী ইঞ্জিন অয়েল ঠিক করা উচিত। একটা কম সিসির গাড়ির জন্য সিনথেটিক ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করাটা বোকামি। কারণ এর মূল্য যেমন বেশি তেমনি এসব গাড়ি বা মোটর বাইকে ব্যবহার করা উচিত না। এছাড়া কিছু দিন পর পরই ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করা উচিত। তাই ভেবে চিন্তে সব সুবিধা অসুবিধা জেনে তার পর সিদ্ধান্ত নিতে হয়। আমি মনে করি সিনথেটিক আর মিনারেল দুটো ইঞ্জিন অয়েলই উত্তম। তবে গাড়ি ও মোটর বাইক বুঝে এগুলো ব্যবহার করতে হয়।