মোটর সাইকেল গিয়ার-আপ নিয়ে আলোচনা

আগস্ট 17, 2019

মোটর সাইকেল গিয়ার-আপ নিয়ে আলোচনা

মোটর সাইকেল বা বাইককে বলা হয় তারুণ্যের বাহন। তবে কেবলই যে তরুণদের আগ্রহ এমনটা না। মাঝ বয়সী অনেকের কাছেও মোটর সাইকেল বা বাইক প্রিয় একটি বাহন। মোটর সাইকেল বা বাইকের কম্বিনেশনটা হলো গতির উন্মাদনার সাথে স্বাধীনতার সংমিশ্রণ। কিন্তু এটা ভাবলেই হবে? নিরাপত্তা নিয়ে ভাবতে হবে না? সবার আগেই যে প্রয়োজন নিরাপত্তার। আমাদের দেশের আবহাওয়া বৈচিত্র্যময়। আর রাস্তার অবস্থা? সেটা তো সবারই জানা। আমরা যারা ভ্রমণ পিয়াসু তারা বাইকে চড়ে লং ড্রাইভ খুব উপভোগ্য জার্নি। কিন্তু এর জন্য আমাদের প্রয়োজন হয় নিরাপত্তার। অন্যদিকে অনেকেই বাইক স্টান্ট করতে পছন্দ করেন কিন্তু এর জন্যও প্রয়োজন সঠিক নিরাপত্তার।

বাইকারদের জন্য নিরাপত্তার জন্য আছে সেফটি গিয়ারস। আমাদের আজকের আলোচনা এই সেফটি গিয়ারস নিয়ে। আমরা জানবো এই সেফটি গিয়ারস কি কি এবং তাদের কাজ সম্পর্কে।

হেলমেট :
বাইকের জন্য হেলমেট হলো নিরাপত্তা কবজ। দেখতে একদম রাজার মুকুটের মত। এবং কাজও করে মুকুটের মতই। একজন বাইকারের জীবন বাঁচাতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। বাইকাররা অন্য সব সেফটি গিয়ারসের কথা না ভাবলেও হেলমেট ঠিকই সাথে রাখেন। মূলত বাইকের ইঞ্জিন চালু করার পূর্বে হেলমেট পড়ে নেওয়া উচিত। বাইক অনুযায়ী এবং কাজ বুঝে অনেক কয়েক রকমের হেলমেট হয়। যেমন – হাফ হেলমেট, ফুল ফেস হেলমেট, ওপেন ফেইস হেলমেট প্রভৃতি।

Eyewear বা চোখ সুরক্ষা কারক বস্তু :

চোখ মানব দেহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আর এজন্য তার নিরাপত্তার বিষয়টিও অবহেলার নয়। চোখের সুরক্ষায় ভালো হেলমেট হয়তো যথেষ্ট কিন্ত কিছু হেলমেটে সামনে ভাইসর(Visor) থাকে না সেগুলোতে গগলস ব্যবহার করতে হয়। আবার গ্রীস্মপ্রধান দেশে রোদের তীব্ররশ্মি থেকে বাচতে সানগ্লাস ব্যবহার করা হয়। গগলস মুলত চশমারই রুপান্তরিত রূপ যেখানে মাথার পেছন দিয়ে ফিতে বা রাবার ব্যান্ড দিয়ে আটকানো থাকে এবং চোখের অংশকে বাতাস বা ধুলোকনা থেকে রক্ষা করতে পুরোটা ঢেকে দেয়া থাকে।

গ্লাভস বা হাত মোজা :
যেকোনো ধরনের বিপদ আসলে মানুষ সবার আগে চায় হাত দিয়ে প্রতিরোধ করতে। আর এজন্য হাতের সুরক্ষাকারী কোন বস্তু না থাকলে বিপদ হওয়ার সম্ভবনা অনেক বেশি। আর এজন্যই গ্লাভস বা হাত মোজার ব্যবহার করতে হয়।বাইকারদের জন্য বিভিন্ন কাজের উপযোগী ভিন্ন ভিন্ন গ্লাভস রয়েছে। গ্লাভসগুলোর হাতের তালুর অংশে পাতলা থাকে এবং হ্যান্ডেলবার ধরার জন্য ভালো গ্রিপিং এর ব্যবস্থা থাকতে পারে। হাতের বাইরের দিকে উচু প্যাড এর মাধ্যমে আংগুল বা অন্যান্য অংশগুলোকে সুরক্ষা দেয়া হয়ে থাকে। গ্লাভসগুলোতে নরম ফোম বা প্যাডের পাশাপাশি কাপড়, চামড়া রাবার ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

প্যান্ট :
বাইকার জন্য প্যান্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। সাধারণত বাইক দুর্ঘটনা ঘটলে বাইকাররা মাটিতে আছড়ে পড়েন। আর এজন্য শরীরের নিচের অংশ আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে থাকে। কোমর থেকে নিম্নাংশ রক্ষা করার জন্য প্যান্ট ব্যবহার করা হয়। আর একই সাথে ঠান্ডা বা শীত থেকে রক্ষা পেতে রয়েছে গরম প্যান্টও।

জুতা :

নিরাপত্তার জন্য জুতার বিকল্প নেই। এছাড়া রেসিং বা স্টান্ট যারা করেন তাদের জুতা ব্যবহার করার বিকল্প নেই। রাইডারের পা এর সুরক্ষায় জুতা অবশ্যই ব্যবহার করতে হয়। রাইডারের জুতো গুলো কখনও চামড়া, কখনও রাবার বা নরম ফোম, কাপড় ইত্যাদি দিয়ে তৈরী হয়ে থাকে।

জ্যাকেট ও ভেস্ট:
শরীরের উর্ধাংশ সুরক্ষায় বিভিন্ন ধরনের জ্যাকেট ব্যবহার করা হয়। কেউ শীত থেকে রক্ষা করে, কেউ গরম থেকে। কোনটি চামড়ার তৈরী আবার কেউ কৃত্রিম সুতার। যে যেভাবেই তৈরী হোক, সবার উদ্দেশ্য একটাই- রাইডারের সুরক্ষা। আর ভেস্ট হলো হাতবিহীন পাতলা জ্যাকেট বা জামা। যেটি সাধারনত অন্য পোশাকের উপরে পরা হয়। কখনও বাতাস থেকে বাচার জন্য, কখনও ঠান্ডা থেকে বাচার জন্য ব্যবহার করা হয়। অনেক ভেস্ট উজ্বল রংএর হয়ে থাকে অন্য রাইডারের চোখে দৃশ্যমান থাকার জন্য।

Rainwear বা বৃষ্টি সুরক্ষা বস্তু :
বাংলাদেশে বছরে অন্তত ২মাস বৃষ্টির প্রকোপ থাকে। এছাড়াও অন্যান্য সময়ে এমনকি শীতের সময়েও কখনও কখনও বৃষ্টির দেখা মেলে। তাই প্রতিটি রাইডারের উচিত ভালো মানের রেইনকোট ব্যবহার করা। রেইনকোটগুলো টুপিযুক্ত পা থেকে মাথা পর্যন্ত বৃস্টি থেকে সুরক্ষা দিয়ে থাকে। এছাড়াও বৃস্টির জন্য আলাদা জুতো এবং গ্লাভস ব্যবহার হয়ে থাকে।

Coldwear বা ঠান্ডা সুরক্ষা বস্তু :
বাংলাদেশে শীতের তীব্রতা না থাকলেও শীতকালে বৃষ্টি বা বাতাসের কারনে অনেক বেশি শীত কখনও কখনও অনুভুত হয়ে থাকে। ঠান্ডা থেকে বাচার জন্য ফোমযুক্ত গরম জ্যাকেট, বা চামড়ার জ্যাকেট, হাতমোজা এবং জুতা ব্যবহার হয়ে থাকে। শীত বা বাতাস থেকে বাচার জন্য বিভিন্ন ধরনের headwear পাওয়া যায় যেমন নেক টিউব, মাস্ক ইত্যাদি। এমনকি নাকে যেনো ঠান্ডা না লাগে সেজন্য ব্যবহৃত হয় Breath Box.

Protective Gear বা সুরক্ষা গিয়ার :
বাইকের যেসব সুরক্ষা গিয়ার আছে সেগুলো হলো – Chest Armor, Back Protectors, Elbow Armor, Shoulder Armor, Knee Armor, Hip Armor, Reflective Vests ইত্যাদি। এছাড়াও Tops এবং Bottoms হিসেবে আরো কিছু ছোটবড় গিয়ারস রয়েছে। এই গিয়ার গুলো বাইকারদের দুর্ঘটনার সুরক্ষা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এর আগে আমরা যে গিয়ার গুলো সম্পর্কে জানলাম ওগুলো হলো সাধারণ ব্যবহার্য গিয়ার। মজবুত সুতায় বোনা কাপড়, মজবুত রাবার কখনও ধাতব পাত ইত্যাদি ব্যবহৃত হয় এইসব গিয়ারস এ। কেউ বুক কেউ পিঠ কেউ কনুই আবার কেউ হাটুকে আঘাত থেকে রক্ষা করে।যারা লং ড্রাইভে যান বা স্টান্ট করে থাকেন তারা এইসব গিয়ারস ব্যবহার করতে পারেন।

রেইস এর পোশাক (Racesuits):
নাম দেখেই বুঝতে পারছেন কাদের জন্য এই জিনিস। যদিও আমাদের দেশে রেইস ট্র্যাকে রেইসের ব্যবস্থা নেই কিন্তু হতে কতক্ষন? যারা রেইস পছন্দ করেন তারা নিরাপত্তার জন্য এই স্যুট ব্যবহার করতে পারেন। এই ধরনের স্যুট ফ্লেক্সিবল, আরামদায়ক কিন্তু অবশ্যই সুরক্ষাদায়কও। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই চামড়া দিয়ে প্রস্তুত এই স্যুটে শরীরের অন্যান্য অংশ সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ থাকে।

এই আলোচনা থেকে আমরা জানলাম মোটর সাইকেলের দুর্ঘটনা সুরক্ষা কারক কিছু গিয়ার সম্পর্কে। আমরা গিয়ার হিসেবে কেবল হেলমেটই সচরাচর ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু হেলমেটের মত এই গিয়ারগুলোও অতি গুরুত্বপূর্ণ। মোটর সাইকেল বা বাইক রাইডের সময় আমরা গতি এবং স্বাধীনতার কম্বিনেশনে উত্তেজিত হয়ে পড়ি। কিন্তু আমাদের নিজেদের সুরক্ষার জন্য এসব সেফটি গিয়ার ব্যবহার করা উচিত এবং এ ব্যাপারে সচেতন হওয়ার বিকল্প নেই।