বাইকের ব্যাটারি অতি দ্রুত নষ্ট হবার কারণ ও প্রতিকার

আগস্ট 05, 2019

বাইকের ব্যাটারি অতি দ্রুত নষ্ট হবার কারণ ও প্রতিকার
বাইক নিয়ে যত সমস্যা বা অভিযোগ আছে তার মধ্যে মোটর সাইকেল বা বাইকের ব্যাটারির স্থায়িত্ব কমে যাওয়া অন্যতম। আর দীর্ঘস্থায়ী ব্যাটারি সার্ভিস না পেয়ে অনেকেই হতাশ। এর সঠিক সমাধান কি? আমাদের সমস্যা হলো আমরা রোগী মারা যাবার পরে ডাক্তারের খোঁজ করি এবং তখন রোগের প্রতিকার জানতে আগ্রহী হয়ে উঠি। কিন্তু এই রোগ আসার আগে যখন আমাদের আশে পাশেই কত লোক চিৎকার চেঁচামেচি করে প্রতিকার বা এই রোগ প্রতিরোধের নিয়ম বলে গেছে তখন পাত্তাই দেওয়ার প্রয়োজন মনে করি নি।

বাইক নিয়ে যত সমস্যা বা অভিযোগ আছে তার মধ্যে মোটর সাইকেল বা বাইকের ব্যাটারির স্থায়িত্ব কমে যাওয়া অন্যতম। আর দীর্ঘস্থায়ী ব্যাটারি সার্ভিস না পেয়ে অনেকেই হতাশ। এর সঠিক সমাধান কি? আমাদের সমস্যা হলো আমরা রোগী মারা যাবার পরে ডাক্তারের খোঁজ করি এবং তখন রোগের প্রতিকার জানতে আগ্রহী হয়ে উঠি। কিন্তু এই রোগ আসার আগে যখন আমাদের আশে পাশেই কত লোক চিৎকার চেঁচামেচি করে প্রতিকার বা এই রোগ প্রতিরোধের নিয়ম বলে গেছে তখন পাত্তাই দেওয়ার প্রয়োজন মনে করি নি।

ব্যাটারি নির্মাতারা বলে থাকেন যে, একটি মোটর সাইকেল বা বাইকের ব্যাটারি 48 মাস স্থায়ী হওয়া উচিত, তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবের কারণে ব্যাটারিটির অনধিক মৃত্যুর হয়। এবার আমরা আলোচনা করবো বাইকের ব্যাটারি অতি দ্রুত নষ্ট হওয়ার কারণ আর প্রতিকার নিয়ে।

ব্যাটারি ওভারলোডিং :
আপনি যদি আপনার বাইককে বিয়ে বাড়ির মত সাজাতে চান তবে মনে রাখবেন এটি আপনার বাইকের ব্যাটারি উপর অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করবে। হা আপনি কিছু উপকরন লাগাতেই পারেন, তবে তা স্থাপনের পর বাইকের ইঞ্জিন এবং সমস্ত আনুষাঙ্গিক এক সঙ্গে চালু করে ব্যাটারি এর ভোল্টেজ পরীক্ষা করবেন। যদি ভোল্টেজ ৯ ভোল্টের চেয়ে কম হয় তবে আপনার বাইকের ব্যাটারি মৃত্যু ঝুঁকিতে রয়েছে । আমরা অনেকেই বাইকের বাহ্যিক সৌন্দর্য বাড়াতে গিয়ে উল্টো অনেক বড় ক্ষতিই করে ফেলি।

ভোল্টেজ রেগুলেটরের ত্রুটি :
যারা অধিক সময় বা অনেক লম্বা সময় রাইড করেন তাদের বাইকে এই সমস্যা টি বেশি হয়ে থাকে। লম্বা সময় রাইড করলে ত্রুটিযুক্ত নিয়ন্ত্রক বা বিকল্পগুলি ব্যাটারির জীবনকে হ্রাস করে। এতে বাইকের ব্যাটারি খুব দ্রুত কার্যক্ষমতা হারায়। ত্রুটিপূর্ণ ভোল্টেজ রেগুলেটর চলন্ত অবস্থায় আপনার বাইককে বন্ধ করে দিতে পারে। এর জন্য প্রয়োজন একটি নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর বাইকের রেগুলেটর ও এর সাথে সংযুক্ত সকল পার্টস সঠিক ভাবে আছে কিনা পরিক্ষা করা।

মোটর সাইকেল বা বাইকের চার্জ :

আমরা যত দ্রুত ব্যাটারি খরচ করি সেটা আমাদের মোটরসাইকেল কত দ্রুত রিচার্জ করে দিতেছে? আরেক ভাবে বললে মোবাইল ফোনে চার্জার লাগিয়ে গেমস খেলা ভাবতে পারেন। গেমস খেলতেছি ব্যাটারি খরচ হছে, চার্জার একই সাথে ব্যাটারি রিচার্জ করে যাচ্ছে । রিচার্জের শক্তি বেশি হলে গেমস খেলতে খেলতে ব্যাটারি ফুল হয়ে যাবে। সেইম বেসিক প্রিন্সিপাল মোটরসাইকেল এর বেলাতেও প্রযোজ্য। হেডলাইট জ্বালাইতেছি, হর্ন দিতেছি ব্যাটারি খরচ হচ্ছে, একই সাথে অলটারনেটর ব্যাটারি রিচার্জ করে যাচ্ছে। অনেকেই ব্যাটারি খারাপ হলে চার্জ নিয়ে প্রশ্ন তুলেন। কিন্তু এটা ভুল ধারণা। ব্যাটারি চার্জের জন্য খারাপ হয় না। খারাপ হয় আমাদের ভুল ত্রুটির জন্য।

ব্যাটারি লোড টেস্টিং :
একটা সহজ প্রশ্ন, নতুন মোটরসাইকেল কেনার পর বাজার থেকে এলইডি হেডলাইট বাল্ব, ফগ লাইট, ডাবল পি৯০ হর্ন প্রভৃতি ইনস্টল করলাম। এখন জানতে চাচ্ছি এসব কিছুর লোড আমার মোটরসাইকেল ব্যাটারি কোনো সমস্যা ছাড়া নিতে পারবে কী? দীর্ঘ মেয়াদে সব কিছু নিরাপদে ব্যবহার করতে পারব কিভাবে বুঝব?

উত্তর : ব্র্যান্ড এর একটা মূল্য আছে। অসরাম ফিলিপস এর লাইট যে সার্ভিস দিবে, তা সস্তা চাইনিজ বংশাল লাইট কখনো দিবে না। এক্ষেত্রে আপনার মোটরসাইকেলের কোনো দোষ নাই। ব্যাটারি লোড টেস্টিং হলো সব কিছু চালানো, জ্বালানো অবস্থায় ব্যাটারি তা হাসি মুখে গ্রহণ করছে কি না তা জানা। এজন্য আমাদের দরকার হবে একটা ভোল্ট মিটার। আসে পাশের কোনো ইলেকট্রনিক্স এর দোকানে মোটরসাইকেল নিয়ে কাজটা করতে পারেন। মোটরসাইকেল চালু করুন। হেডলাইট, পার্কিং লাইট, এলইডি লাইট আর যা আছে সব অন করুন। এখন ব্যাটারির ভোল্টেজ মাপুন।

ব্যাটারির ভোল্ট ১২.৬০ = ব্যাটারি খরচ এবং রিচার্জ সমানে সমান। এটা ভালো। ব্যাটারির ভোল্ট ১২.৬০ থেকে কম = ব্যাটারি যতটুকু রিচার্জ হচ্ছে, তার থেকে বেশি খরচ হয়ে যাচ্ছে। এটা খারাপ। মোটরসাইকেল লোড নিতে পারছে না। ব্যাটারির ভোল্ট ১২.৮০ থেকে বেশি = ব্যাটারি যতটুকু খরচ হচ্ছে , তার থেকে বেশি রিচার্জ করতেছে। এটা ভালো লক্ষণ। মোটর সাইকেল নিশ্চিন্তে লোড নিতে পারছে।

বাইকের সাইড নোটস পদ্ধতি :
১ ) মোটরসাইকেল স্টক ওয়ারিং কাটাকাটি করবেন না।
২ ) নতুন কিছু এমন ভাবে ইনস্টল করুন, যাতে যে কোনো সময় পূর্বের অবস্থায় ফেরত যাওয়া যায়।
৩ ) তার জোড়া এমন ভাবে দিন যা হবে মজবুত পানিরোধী, তাইলে দীর্ঘমেয়াদে কিছু হবে না।

৪ ) তার এলোমেলো না রেখে স্টক ওয়ারিং এর পাশে পাশে টানুন।

বাইক কত জোরে রিচার্জ করে :
ব্যাটারি রিচার্জ হয় অলটারনেটর থেকে উৎপন্ন শক্তি দিয়ে। পালসার এই শক্তি উৎপাদন করতে পারে মাত্র ৬০ ওয়াট, অন্যদিকে এফ জি / ফেজার উৎপাদন করে ১২৫ ওয়াট, ইয়ামাহা আর১৫ করে ১৬০ ওয়াট। বোঝাই যাচ্ছে আর১৫ অনেক জোরে কারেন্ট উৎপাদন করে। এই কারেন্ট এসি অবস্থায় থাকে। আমাদের দরকার ডিসি কারেন্ট।

আমরা যখন মোবাইল এ চার্জার লাগাই কি ঘটে? মোবাইল চার্জার ঘরের ২২০ এসি ভোল্ট গ্রহণ করে, এটাকে ডিসি’তে রূপান্তর করে, ছোট ব্যাটারির উপযোগী সীমিত ৪ ভোল্ট নামিয়ে রিচার্জ করতে থাকে। একইভাবে মোটরসাইকেলের রেগুলেটর রেকটিফায়ার ডিভাইসটি এসি ভোল্ট গ্রহণ করে, ডিসি’তে রূপান্তর করে, ১২ ভোল্ট ব্যাটারির উপযোগী ১৪ ভোল্ট এ নামিয়ে রিচার্জ করতে থাকে। মোটরসাইকেল চালু তো ব্যাটারি রিচার্জও চালু। পালসার মোটরসাইকেল এর রেগুলেটর রেকটিফায়ার ব্যাটারি কে সর্বোচ্চ দিতে পারে ৫.৫৬ এম্পায়ার। ইয়ামাহা এফ জি / ফেজার এর রেগুলেটর রেকটিফায়ার সর্বোচ্চ দিতে পারে ২০ এম্পায়ার। ইয়ামাহা আর ১৫ এর রেগুলেটর রেকটিফায়ার সর্বোচ্চ দিতে পারে ১৪ এম্পায়ার। অর্থাৎ, ব্যাটারি রিচার্জ এর গতিতে ইয়ামাহা এফ জি / ফেজার (২০ এম্পায়ার ) সবার আগে। কারেন্ট উৎপাদন দিক থেকে ইয়ামাহা আর ১৫ সবার আগে (১৬০ ওয়াট) .। ব্যাটারি ধারণ ক্ষমতার দিক থেকে পালসার সবার আগে (৯ এম্পায়ার ব্যাটারি ) .।

ব্যাটারির রক্ষণাবেক্ষণ :
ব্যাটারি রক্ষনাবেক্ষণ খুব একটা প্রয়োজন পরে না। এখন বেশির ভাগ লিড এসিড ব্যাটারি সিলড অবস্থায় থাকে। যেগুলো সিলড থাকে না, ব্যটারী পানি দাগ সমান সমান আছে কি না দেখবেন। না থাকলে বা কমে গেলে শুধু ব্যটারির পানি দিয়ে রিফিল করবেন দাগ সমান। মোটরসাইকেল সার্ভিসিং এর সময় সেখানে রিচার্জ করে নিবেন। ব্যাটারির দোকানে উচ্চ এম্পায়ার এ রিচার্জ করে, এটা বাস ট্রাক গাড়ির ৩৫, ৫০, ৬০ এম্পায়ার ব্যাটারির জন্য ঠিক আছে । মোটরসাইকেল এর ব্যাটারি মাত্র ৩, ৫, ৯ এম্পায়ার হয়। ব্যাটারি টার্মিনাল শুকনা রাখবেন না, সেখানে সাদা নিল বালু বালু করোসান হতে পারে। এটা দীর্ঘমেয়াদে পসিটিভ নেগেটিভ টার্মিনাল খেয়ে ফেলে, তারের জয়েন্ট খেয়ে ফেলে। টার্মিনাল গুলো ভালো করে পরিষ্কার করে মেরিল পেট্রোলিয়াম জেলি লাগায় দেন। আর করোসান হবে না। বাজারে কালো রঙের কিছু ব্যাটারি পাওয়া যায়। ইউ পি এস এর ভিতরে এরকম ব্যাটারি থাকে। এগুলা মোটরসাইকেল এ লাগাবেন না। এগুলা ডিপ সাইকেল ব্যটারী বা অনেকক্ষণ ধরে নির্দিষ্ট খরচে চলার জন্য তৈরী। মোটরসাইকেল এ আমরা যে ব্যাটারি ব্যবহার করি এগুলা হুট করে প্রচুর খরচ করার জন্য তৈরী। যেমন স্টার্টার মোটর ১২৫ ওয়াট দুই চার সেকেন্ড এ প্রচুর খরচ করে। ইঞ্জিন চালু হয়ে গেলে একটু পরে রিচার্জ হতে থাকে। এসব ব্যাটারির ৮০% চার্জ সবসময় মজুদ থাকে। এদের মেন কাজ হলো cca বা কোল্ড ক্রানক এম্পায়ার বা হুট করে প্রচুর খরচ করার জন্য প্রস্তুত থাকা ।

প্রতিকার :

* প্রতি মাসে ব্যাটারির কার্যক্ষমতা পরীক্ষা করা উচিত।

* ব্যাটারিতে ফুটো আছে কি না পরীক্ষা করতে হয়।

* লং ড্রাইভে যাওয়ার আগে ব্যাটারি পরীক্ষা করা উচিত।

* হেড লাইট জ্বালানো অবস্থায় সেল্ফ দেওয়া যাবে না।

* দিনের প্রথম রাইডের সময় কিক ব্যবহার করতে হবে।

* রাতের বেলায় যদি ট্রাফিক জ্যামে বা সিগন্যালে আটকে থাকতে হয় লম্বা সময় তখন হেড লাইট বন্ধ করে রাখতে হবে।

উপরের আলোচনা থেকে আমরা জানলাম বাইকের ব্যাটারি নষ্ট হওয়ার কারণ আর প্রতিকার নিয়ে। নষ্ট হবার পেছনে বড় কারণ আমাদের অসচেতনা আর অবহেলা। প্রতিকারের নিয়মগুলো খুব একটা জটিল এমন না। কিছু সময় ব্যয় করলেই প্রতিকার করা সম্ভব। তাই জটিল না ভেবে সঠিক নিয়ম মেনে নেওয়াটা জরুরী। আর এতে করে মঙ্গল আমাদেরই, মঙ্গল আমাদের বাইকেরই।