কার্বুরেটর টিউনিং

জুলাই 28, 2019

কার্বুরেটর টিউনিং

কার্বুরেটর বাইকের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। বাইক কিংবা মোটর সাইকেলের ভালো পারফরমেন্স পেতে হলে কার্বুরেট টিউনিং সঠিক ভাবে করতে হবে। অনেকের মতে কার্বুরেট থেকে তেল কমিয়ে রাখলেই ভালো মাইলেজ পাওয়া সম্ভব। কিন্তু এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। কার্বুরেটর বাতাস ও জ্বালানিকে সমন্বয় করে ইঞ্জিনে সরবরাহ করে থাকে। কাজেই এই সমন্বয়টা যদি ভালো না হয় তবে ভালো পারফরমেন্স পাওয়া সম্ভব না। সমন্বয়টা সঠিক হলে তবেই ভালো পারফরমেন্স পাওয়া সম্ভব বাইক বা মোটর সাইকেল থেকে।

কার্বুরেটর টিউনিং নিয়ে আমাদের অনেক মোটর সাইকেল ব্যবহারকারী ভাই অনেক ভুক্তভোগী। অধিকাংশ মেকানিক/টেকনিশিয়ান কার্বোরেটর টিউনিং এর সঠিক প্রক্রিয়া না জানার কারণে, ভুল প্রক্রিয়ায় কার্বোরেটর টিউনিং করে দেয়, এতে জ্বালানী তেল ও বাতাসের সঠিক ভাবে সমন্বয় না হওয়ার কারণে বাইকের পারফর্মেন্স ও মাইলেজ কমে যায়। ইঞ্জিন অতিরিক্ত গরম হয়, ষ্টার্ট বন্ধ হয়ে যায়, স্বাভাবিকের চেয়ে ধীরে ধীরে গতি বাড়া সহ অনেক সমস্যায় ভোগেন।

চলুন কার্বুরেটর টিউনিং এর সঠিক টিপস নিয়ে আলোচনা করা যাক।

টিউনিং ধাপ ০১ : টিউনিং এর পূর্বে দুই থেকে চার কিলো মিটার অথবা ১০ থেকে ১৫ মিনিট মোটর সাইকেল বা বাইকটিকে চালিয়ে নিতে হয়। এতে করে বাইকের ইঞ্জিন গরম হবে। আর স্বাভাবিক তাপমাত্রা পাওয়া যাবে সঠিকভাবে।

টিউনিং ধাপ ০২ : এবারের কাজ হলো স্বাভাবিক আরপিএম বা আইডল আরপিএম কিছুটা বাড়িয়ে নেওয়া। কার্বুরেটর একটি স্প্রিং যুক্ত স্ক্রু আছে আর সেটাই হলো আদর্শ বা আইডল আরপিএম স্ক্রু। স্ক্রু’ টা কে ঘড়ির কাটার মত যদি ঘুরানো হয় তবে আরপিএম বাড়বে আবার যদি উল্টো দিকে ঘুরানো হয় তবে আরপিএম কমবে।

টিউনিং ধাপ ০৩ : আইডল আরপিএম বাড়ানো হয়ে গেলে লক্ষ করুন কার্বুরেটরে ছোট একটা স্ক্রু আছে, এটাকে ফুয়েল বা এয়ার মিক্সার স্ক্রু বলে। এটাই জ্বালানী তেল ও বাতাসকে সমন্বয় করে ইঞ্জিনকে সরবরাহ করে। যখনই বাতাস আর জ্বালানী তেল সঠিক পরিমানে প্রবাহিত হবে, তখনই আপনি সঠিক মাইলেজ ও পারফর্মেন্স পাবেন। ফুয়েল মিক্সার স্ক্রুটি ঘড়ির কাটার দিকে ঘুরালে জ্বালানী তেলের প্রবাহ বাড়বে এবং বাতাসে প্রবাহ কমবে। আবার ঘড়ির কাটার বিপরীত দিকে ঘুরালে বাতাসের প্রবাহ বাড়বে এবং জ্বালানী তেলের প্রবাহ কমবে। এখন প্রশ্ন হলো, কিভাবে বুঝবেন আপনার বাইকের জন্য ঠিক কতোটুকু বাতাস ও জ্বালানী তেলের সমন্বয় প্রয়োজন?? উঃ আপনার বাইকই বলে দিবে। তার কি পরিমানে বাতাস ও জ্বালানী তেলের মিশ্রণ প্রয়োজন।

টিউনিং ধাপ ০৪ : ফুয়েল মিক্সার স্ক্রুটি ঘড়ির কাটার দিকে হালাকা ভাবে ঘুরাতে থাকেন, যত ক্ষণ পর্যন্ত না স্ক্রুটি টাইট না হয়। সাবধান, খুব আস্তে আস্তে ঘুরাবেন, প্রেশার দেয়া যাবে না।

টিউনিং ধাপ ০৫ : স্ক্রু টাইট হতে হতে যদি ষ্টার্ট বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে স্ক্রু টাইট হওয়ার পর ঘড়ির কাটার বিপরীত দিকে একবার স্ক্রুটি ঘুরান এবং বাইক ষ্টার্ট করুন। যদি ষ্টার্ট বন্ধ না হয়, তাহলেতো সমস্যাই নেই।

টিউনিং ধাপ ০৬ : বাইক ষ্টার্ট দেয়ার পর ফুয়েল মিক্সার স্ক্রুটি ঘড়ির কাটার বিপরীত দিকে আস্তে আস্তে ঘুরান, আর ইঞ্জিনের সাউন্ড বা আরপিএম লক্ষ্য করুন, ঘুরা ঘুরাতে যখন দেখবেন ইঞ্জিনের আরপিএম সর্বোচ্চ হয়ে গেছে, যার পরে স্ক্রু টি ঘুড়ালেও ইঞ্জিন আর শক্তি উৎপন্ন করতে পারছে না, ঐ স্টেপেই থেমে যান।

টিউনিং ধাপ ০৭ : এবার আরপিএম কমিয়ে নিতে হবে। আইডল আরপিএম ১০০০ থেকে ১২০০ তে রাখতে হবে। আর এতে করে স্টার্ট ঠিক থাকে। আর এভাবেই হয়ে গেল আরপিএম টিউনিং। শুধু কার্বোরেটর টিউনিং ঠিক থাকলেও মাইলেজ কম পাবেন যদি ষ্পার্ক প্লাগটি ঠিক না থাকে, স্পার্ক প্লাগটি চেক করুন এবং পরিষ্কার করুন। নিয়মিত বাইকের ঘুর্ণায়মান যন্ত্রাংশ গুলো চেক করুন এবং ফ্রি রাখুন। ভালো মানের জ্বালানী তেল, সঠিক গ্রেডের আসল ইঞ্জিন ওয়েল ব্যবহার করুন। চাকার এয়ার পরিমান সঠিক মাপে রাখুন।

বাইক ইঞ্জিনিয়াররা বলেন এই সাতটি ধাপ মেনে আরপিএম টিউনিং করা উচিত।