ABS ব্রেকিং এর সুবিধা ও অসুবিধা

জুলাই 11, 2019

ABS ব্রেকিং এর সুবিধা ও অসুবিধা

বাংলাদেশে যাতায়াতের জন্য যানবাহনের অভার নেই। অনেক ধরনের যানবাহন আছে। কিন্তু সব যানবাহনের মধ্যে মোটর সাইকেল বা মোটর বাইক সবচেয়ে বহুল পরিচিত এবং সহজ একটি যাতায়াত মাধ্যম। মোটর চালিত যত সব যানবাহন আছে একমাত্র মোটর সাইকেল ছাড়া সব গুলোই তিন বা চার চাকা বিশিষ্ট। একমাত্র মোটর বাইক বা মোটর সাইকেল দুই চাকা বিশিষ্ট। এজন্যই মোটর বাইক যেমন চলাচলের জন্য সুবিধা জনক আবার একই ভাবে অনেক ক্ষেত্রে এই যানবাহনের চালককে হিমশিম খেতে হয়। এই মোটর বাইকের একটি পরিচিত ফিচারের নাম ABS ব্রেকিং। যার পুরো নাম হলো Anti Lock Breaking System. এখন আমরা আলোচনা করবো এই Anti Lock Breaking System এর সুবিধা আর অসুবিধা নিয়ে।

দুই চাকা বিশিষ্ট এই মোটর সাইকেলে দুটি ব্রেক থাকে। সামনের দিনের ব্রেককে বলা হয় ফ্রন্ট ব্রেক। আর পেছনের দিকের ব্রেককে বলা হয় রেয়ার ব্রেক। কিন্তু কয়েক বছর আগেও আমাদের দেশে এই দুটো ব্রেক অর্থাৎ ফ্রন্ট ব্রেক আর রেয়ার ব্রেক দুটিতে ড্রাম ব্রেক ব্যবহার করা হতো। কিন্তু দিন যতই এগিয়েছে, প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে মানুষ সময় উপযোগী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নিরাপত্তার কথা চিন্তা করেছে। মোটর সাইকেল বা মোটর বাইকের ব্রেকিং সিস্টেম শক্তিশালী, মজবুত আর নিরাপদ করতে কয়েক প্রযুক্তির নতুন ব্রেকিং সিস্টেমে ওঠে এসেছে। যেমন, ডিস্ক ব্রেক, এবিএস ব্রেকিং আর সিবিএস ব্রেকিং অন্যতম। এখন জানা যাক ABS ব্রেকিং এর সুবিধা ও অসুবিধা নিয়ে এবং একইসাথে কেনই বা এই ব্রেকিং সিস্টেম অন্যগুলো থেকে আলাদা। তবে এর সাথে আমরা এই ব্রেকিং সিস্টেমের উদ্ভাবন নিয়েই জানবো এখন।

ABS ব্রেকিং এর উৎপত্তি : ABS ব্রেকিং হলো Anti Lock Breaking System. জানা যায় ১৯২০ সালে গাব্রিয়েল ভাইসিন নামক একজন হাইড্রোলিক ব্রেক সিস্টেমটাকে মজবুত আর শক্তিশালী করার জন্য ABS ব্রেকিং নিয়ে চিন্তা ভাবনা শুরু করেন। তবে মজার ব্যাপার হলো এই ব্রেকিং নিয়ে চিন্তা করেছিলেন তার নিজস্ব এয়ারক্রাফরের জন্য। কিন্তু কালের পরিক্রমায় এই ব্রেকিং সিস্টেম এখন দুই চাকার মোটর বাইকেও চলে এসেছে। তবে ABS ব্রেকিং এর প্রথম প্যাটার্ন আবিষ্কার করেন একজন জার্মান ইঞ্জিনিয়ার। ১৯২৮ ইঞ্জিনিয়ার কার্ল ওয়েলনেস প্রথম ABS ব্রেকিং এর উদ্ভাবন করেন। পরবর্তীতে ১৯৫৮ সালে রয়েল এনফিল্ড সুপার মোটর বাইকে ABS ব্রেকিং এর পরীক্ষা চালানো হয়। কিন্তু ১৯৮৮ সালেই প্রথম অফিসিয়ালভাবে যাত্রা শুরু করে ABS ব্রেকিং। তবে সে বাইকটি ছিলো BMW K100. এর বেশ কিছু বছর পরে একটু একটু করে পুরো বিশ্বে মোটর বাইকে এই ABS ব্রেকিং সিস্টেম পুরোদমে চলে আসে। উল্লেখ্য, এই ব্রেকিং সিস্টেম মোটর বাইকের আগে অন্যান্য বড় গাড়িতে আগে এসেছে।

ABS ব্রেকিং নিয়ে আমরা আগে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। তবুও আবার বলছি, এই ABS হলো এক ধরনের ব্রেকিং সিস্টেম, যা গাড়িকে বা মোটর বাইককে খুব সহজেই কন্ট্রোল করতে সাহায্য করে। মূলত একটি সেন্সরের মাধ্যমে এই ব্রেকিং সিস্টেম পরিচালিত হয়ে থাকে। এর ব্রেকিং সিস্টেমের ফলে দুর্ঘটনা অনেকটাই কমে গেছে। অর্থাৎ নিরাপদে যাতাযাতের জন্য গাড়ি বা মোটর বাইকে এই ব্রেকিং সিস্টেম যুক্ত করা হয়েছে।

এবার জানা যাক এই ABS বা Anti Lock Breaking System এর সুবিধা ও অসুবিধা গুলো।

ABS ব্রেকিং এর সুবিধা :

১. ABS ব্রেকিং সিস্টেম বড় – ছোট সব ধরনের মোটর বাইকে ইন্সটল করা সম্ভব।

২. ক্রুজার, টুরিং এবং স্পোর্টস বাইক গুলোতে ABS ব্রেকিং সিস্টেম সবচেয়ে ভালো পারফরমেন্স দেয়।

৩. বাইকে কর্ণারিং করার সময় এই ABS ব্রেকিং সিস্টেম অন্য রকম কনফিডেন্স বা আত্মবিশ্বাস দেয় যার ফলে দুর্ঘটনা হওয়ার সম্ভবনা থাকে না।

৪. সঠিক ভাবে মোটর বাইক, মোটর সাইকেল কিংবা যেকোনো ধরনের গাড়িতে ব্রেক করতে ABS ব্রেকিং সক্রিয় ভূমিকা পালন করে।

৫. ABS ব্রেকিং থাকলে হঠাৎ করে জরুরী প্রয়োজনে ব্রেক চাপলে বাইক থেকে পড়ে যাওয়ার সম্ভবনা একদমই নেই। কারণ এই ব্রেকিং সিস্টেম চাকা লক না হতে সাহায্য করে।

৬. ABS ব্রেকিং মোটর সাইকেলের জন্য একদম নতুন এক ফিচার যা অনেক প্রয়োজনীয়।

৭. এই ABS ব্রেকিং এতটাই উন্নত ফিচার যে চালক বা রাইডারের কন্ট্রোলের বাইরে বাইক চলে যাবার কোন সম্ভবনাই থাকে না।

৮. ABS বা Anti Lock Breaking System ব্রেকিং এর সময় আত্মবিশ্বাস প্রদান করে।

এবার জানবো ABS ব্রেকিং এর অসুবিধা গুলো নিয়ে।

ABS ব্রেকিং এর অসুবিধা :

১. যারা মোটর বাইক বা মোটর সাইকেল নিয়ে স্টান্ট করেন তাদের জন্য Anti Lock Breaking System নয়, কেননা এই সিস্টেমে ব্রেক এক বারে লক হয় না, তাই স্টান্ট করা সম্ভব হয়ে ওঠে না।

২. একদম নতুন অবস্থায় ABS সিস্টেম ব্যবহার করতে সমস্যা হয়। এই ব্রেকিং সিস্টেম ফ্রি হতে একটু সময় লাগে।

৩. ABS ব্রেকিং এর দাম একটু বেশি হয়ে থাকে।

৪. এক্সট্রিম সিচুয়েশনে যখন হার্ড ব্রেক এর জরুরী প্রয়োজন পড়ে তখন বাইকারকে একটু সমস্যায় ফেলতে পারে।

৫. যারা হার্ড বাইকার তাদের জন্য এই ফিচারটি একদমই উপযুক্ত না।

৬. ABS ব্রেকিং সিস্টেম একটি মেকানিকাল ফিচার তাই চাইলেই আপনি যেকোনো সময় বন্ধ করতে পারবেন না।

৭. ABS ফিচার ইন্সটল করা সহজ না, কাজেই ইঞ্জিনিয়ার বা মেকানিকের সাহায্য নেওয়া বাধ্যতামূলক।

এই আলোচনায় আমরা ABS বা Anti Lock Breaking System এর সুবিধা ও অসুবিধা নিয়ে জানলাম। এই ফিচারে যেমন বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে তেমনি অনেক গুলো অসুবিধা ও আছে। তবে অসুবিধা যেগুলো আছে এগুলোর চাইতে সুবিধা গুলোই বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই ফিচার একজন বাইকারকে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। বিশেষ করে নতুন মোটর সাইকেল বা বাইকের জন্য ABS ব্রেকিং গুরুত্বপূর্ণ। নতুন অবস্থায় মোটর বাইকের ব্রেকিং সঠিকভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হয় না। আর এ কারণেই এই সময়টায় ABS ব্রেকিং জরুরী। ABS ব্রেকিং ব্রেকের উপরে চাপ ও গতি নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। তবে এই ব্রেকিং রাস্তার অবস্থা, চাকার প্রেশার ও চাকার বিট নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা রাখে না। তারপরেও এই ABS ব্রেকিং এর ফলে আপনার মোটর বাইকটি ব্রেক করলে যতটুকু দূরত্বে গিয়ে থামার কথা তার থেকে অনেক আগেই থেমে যাবে। আর এই দূরত্বটাই আপনার,আমার জীবন বাঁচিয়ে দিতে পারে। একইসাথে বৃষ্টি ভেজা, কাঁদা বা বালু যুক্ত রাস্তায় ABS ব্রেকিং সিস্টেম এর বিকল্প নেই। কারণ এই সময়টায় বাইকের চাকা স্লিপ করার সম্ভবনা থাকে অনেল বেশি। ব্রেক চাপলেই পড়ে যেতে পারেন। সত্যিকার অর্থে তখনই ABS ব্রেকিং এর উপকারিতা লক্ষ্য করা যায়। আপনার গাড়ি বা বাইকের চাকাকে স্লিপ করা থেকে বিরত রাখে ABS ব্রেকিং। এছাড়াও মনে করেন আপনি খুব দ্রুত গতিতে বাইক চালিয়ে যাচ্ছেন কিন্তু হুট করেই কিছু একটা সামনে চলে এসেছে। আপনি সঠিকভাবে চিন্তা করার সময়টাও নেই। কিন্তু আপনি জানেন ব্রেক করলেই মাটিতে পড়ে যাবেন। আর এতে অনেক বড় দুর্ঘটনাও ঘটে যেতে পারে। আপনার বাইকে যদি ABS ব্রেকিং সিস্টেম ইন্সটল করা থাকে তবে এই সময়টাতে ব্রেক করলেও পড়ে যাওয়া আর দুর্ঘটনা থেকে অনায়াসে বেঁচে যেতে পারেন। আমাদের দেশে অনেকেই শোনা যায় এই ফিচার নিয়ে সমালোচনা করেন বা নেগেটিভ রিভিউ দেন কিন্তু এর আগে ফিচারটি সম্পর্কে জেনে নেওয়া দরকার। কেননা ভালো করে এ সম্পর্কে জেনে নিলে তখন আর এমন মন্তব্য শোনা যাবার বিন্দুমাত্র সম্ভবনা থাকবে না।